প্রাচীন ভারতীয় রত্নপাথর নিলাম নিয়ে বিতর্ক, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া। হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এক নিলামকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
নিলামে উঠছে প্রাচীন ভারতীয় রত্নপাথর, যা ‘বুদ্ধের উপস্থিতি’ ধারণ করে আছে বলে মনে করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এই নিলামের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন বৌদ্ধ পণ্ডিত ও মঠের গুরুরা।
তাদের মতে, এই ধরনের পবিত্র প্রত্নতত্ত্বের নিলাম বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি চরম অবজ্ঞা।
জানা গেছে, নিলামে উঠতে যাওয়া এই রত্নপাথরগুলো ‘পিপরাহওয়া রত্ন’ নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এগুলোর বয়স প্রায় ২,২০০ থেকে ২,৪০০ বছর।
এই অমূল্য রত্নগুলো পাওয়া গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের পিপরাহওয়া নামক স্থানে, একটি স্তূপের ভেতর। স্তূপের ভেতরে রত্নপাথরের সাথে ছিল বুদ্ধের দেহাবশেষও।
ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বুদ্ধের দেহাবশেষের সাথে এই রত্নগুলো সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, এই রত্নপাথরগুলো একসময় ব্রিটিশ প্রকৌশলী উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পের তত্ত্বাবধানে খনন করা হয়েছিল। এরপর ব্রিটিশ সরকার কিছু অংশ নিজেদের হেফাজতে নেয় এবং কিছু অংশ কলকাতার জাদুঘরে পাঠানো হয়।
পেপ্পে পরিবার তাদের কাছে থাকা রত্নপাথরগুলো নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিলামের ঘোষণার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, এই রত্নপাথরগুলো নিছক পাথর নয়, বরং এগুলো বুদ্ধের পবিত্র স্মৃতির অংশ।
অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে এই রত্নগুলো গভীর শ্রদ্ধার বিষয়, যা তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাশলি থম্পসন এবং শিল্প-সংগ্রাহক কোনান চেং-এর মতো বিশেষজ্ঞরা এই নিলামের নৈতিক দিক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ঔপনিবেশিক আমলে ‘অন্যায়ভাবে’ অর্জিত সম্পদ এভাবে নিলামে তোলা উচিত নয়।
তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ঐতিহ্য রক্ষার পরিবর্তে বরং অতীতের ভুলগুলোকে আরও একবার সামনে নিয়ে আসে।
অন্যদিকে, রত্নপাথরগুলোর বর্তমান মালিকপক্ষ বলছে, নিলামের মাধ্যমে এই রত্নগুলোকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাদের বিশ্বাস, নিলামের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
তারা আরও জানায়, নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ তারা বিভিন্ন মন্দির ও বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করতে আগ্রহী।
এই নিলামের সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন হংকং ডলার (প্রায় ১ হাজার ৩৫০ কোটি বাংলাদেশী টাকা)। তবে নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এর বিরোধিতা জোরালো হওয়ায়, শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান