ডাইনোসরদের যুগে বাস করা এক অদ্ভুত পোকা! বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ৯৯ মিলিয়ন বছর আগের একটি প্রাচীন পরজীবী বোলতার সন্ধান পেয়েছেন, যা কিনা শিকার ধরার জন্য “শুক্রাণুফাঁদের” মতো কৌশল ব্যবহার করত।
মিয়ানমারের কাচিন অঞ্চলের একটি অ্যাম্বারে (গাঢ় হলুদ আঠালো পদার্থ) এই বোলতাটি সংরক্ষিত ছিল। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন *Sirenobethylus charybdis*, গ্রিক পুরাণের এক সমুদ্র দানবের নামে, যে তার চারপাশের জলকে আবর্তিত করত।
এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে, কারণ এটি পোকামাকড়ের বিবর্তন এবং তাদের অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
ডেনমার্কের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের গবেষক লার্স ভিলহেল্মসেন এই বিষয়ে বলেছেন, “এই বোলতার পেটের অংশে থাকা কাঠামোটি অনেকটা ছোট আকারের “ভাল্লুকের খাঁচার” মতো, যা শিকারকে আটকাতে কাজে লাগত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বোলতাটির এই বিশেষ গঠন, যা কিনা “ফ্লাপ” এবং কাঁটার মতো লোম দ্বারা গঠিত, দেখতে অনেকটা মাংসাশী “শুক্রাণুফাঁদ” উদ্ভিদের মতো।
এই উদ্ভিদের পাতাগুলো শিকারী পোকামাকড় ধরবার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, বোলতার এই ফাঁদ শিকারকে পিষে মারার বদলে, ডিম পাড়ার সময় ধরে রাখার কাজে লাগত।
সাধারণত, পরজীবী বোলতারা তাদের শিকারের শরীরে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে সেই শিকারকে খেয়ে বাঁচে।
এই বোলতার ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া দেখা গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ লিন কিমসি, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, “আমি অনেক অদ্ভুত পোকামাকড় দেখেছি, তবে এটি সম্ভবত সবচেয়ে অদ্ভুতগুলোর মধ্যে একটি।
গবেষণাটি সম্প্রতি `BMC Biology` জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় চীনের ক্যপিটাল নরমাল ইউনিভার্সিটি এবং বেইজিং জিয়াচং অ্যাম্বার জাদুঘরের গবেষকরাও জড়িত ছিলেন।
বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, এই বোলতা প্রজাতিটি ঠিক কবে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে, এ ধরনের বিরল পোকামাকড় নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা তাদের সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ গ্যাব্রিয়েল মেলো, যিনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, “আমরা প্রায়ই মনে করি, দারুণ সব জিনিস শুধু আজকেই পাওয়া যায়।
কিন্তু এমন আবিষ্কার প্রমাণ করে, অতীতেও কত অসাধারণ এবং বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস