ভয়ংকর দুর্ঘটনার পর ক্রিকেটই যেন ‘জীবন বাঁচানো’ ফ্লিনটফের!

ক্রিকেটার থেকে টেলিভিশন তারকা, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ফিরে আসা: অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, যিনি ‘ফ্রেডি’ নামেই বেশি পরিচিত, তার জীবনের এক কঠিন অধ্যায় পেরিয়ে এসেছেন। বিবিসির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘টপ গিয়ার’-এর শুটিংয়ের সময় ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। সেই ঘটনার মানসিক ও শারীরিক ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন এই তারকা।

তবে, ক্রিকেটে ফেরার মধ্যে যেন নতুন করে জীবন খুঁজে পেয়েছেন তিনি। আসন্ন একটি ডকুমেন্টারিতে ফ্লিনটফ নিজেই তার এই কঠিন সময়ের কথা তুলে ধরেছেন।

ডিসেম্বর ২০২২-এ ডান্সফোল্ড এরোড্রোমে (Dunsfold Aerodrome) ‘টপ গিয়ার’-এর শুটিং চলাকালীন একটি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন ফ্লিনটফ। একটি তিন চাকার গাড়িতে করে স্টান্ট করার সময় গাড়িটি উল্টে যায়। দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি সবকিছু মনে করতে পারি।

যখন ভাবি, এখনো যেন সেই গাড়িতেই আছি। তারা আমাকে গাড়িটি কীভাবে সাইডওয়েজ করতে হয়, তা দেখাচ্ছিল। হঠাৎ করেই গাড়ির চাকা খুলে যায়।” মারাত্মক এই দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন তিনি ঘরবন্দী ছিলেন।

দুর্ঘটনার পর কয়েক মাস ফ্লিনটফ ঘর থেকে বের হননি, এমনকি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও যেতে পারেননি। একসময় তিনি জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। মানসিক অবসাদ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তার মনে হতো— “হয়তো মরে গেলেই ভালো হতো”।

সম্প্রতি প্রকাশিত হতে যাওয়া ডিজনি প্লাস (Disney+) -এর ডকুমেন্টারিতে তিনি তার এই মানসিক অবস্থার কথা বলেছেন।

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর ফ্লিনটফ টেলিভিশন জগতে নাম লেখান। কিন্তু খেলার মাঠের প্রতি ভালোবাসা তাকে আবার ফিরিয়ে আনে। শুরুতে ইংল্যান্ড দলের হয়ে কিছু সেশন পরিচালনা করেন, এরপর ২০২৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড লায়ন্সের (England Lions) কোচ হিসেবে যোগ দেন।

বর্তমানে তিনি ‘হানড্রেড’ (Hundred) -এর দল নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের (Northern Superchargers) কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।

ফ্লিনটফ বলেন, “এই ঘটনার ইতিবাচক দিক হলো— আমি আবার ক্রিকেটে ফিরে এসেছি। সম্ভবত এটাই আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি আবার সেই জগতে ফিরে এসেছি, যা আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়। ড্রেসিংরুমে বসে যখন খেলা দেখি, তখন মনে হয় যেন সব ভুলে গেছি।”

২০১৯ সাল থেকে ফ্লিনটফ ‘টপ গিয়ার’-এর উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্যাডি ম্যাকগিনেস ও ক্রিস হ্যারিস।

অনুষ্ঠানটি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে, ফ্লিনটফের মতে, দর্শকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য নির্মাতারা অনেক সময় উপস্থাপকদের নিরাপত্তা নিয়ে আপস করতেন।

তিনি বলেন, “প্রত্যেকেই আরও বেশি কিছু চায়। সবাই চায় এমন কিছু, যা আগে কেউ দেখেনি। সবার মধ্যেই যেন আরও গভীরে যাওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে। তারা চায় সবচেয়ে বড় স্টান্ট, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করবে।

কিন্তু খেলা এবং টিভির জগৎ একই রকম। এখানে আপনি কেবল একটি পণ্যের মতো।”

দুর্ঘটনার পর বিবিসি স্টুডিওজের সঙ্গে ফ্লিনটফের £৯ মিলিয়ন (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকার বেশি) -এর একটি সমঝোতা হয়। এরপর বিবিসি এই প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দেয়।

এই ডকুমেন্টারিতে ফ্লিনটফের ক্রিকেট এবং বিনোদন জগতের সহকর্মীদেরও দেখা যাবে, যাদের মধ্যে রয়েছেন জেমস কর্ডেন, জ্যাক হোয়াইটহল, রব কিয়ের মতো তারকারা। তাদের পাশাপাশি ফ্লিনটফের স্ত্রী রাচেল এবং চিকিৎসা কর্মীরাও তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সী ফ্লিনটফ বলেন, “আমি এখনো দুঃস্বপ্ন দেখি…আমি হয়তো আগের মতো হতে পারব না, তবে আমি এখন অন্যরকম। আমি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তার জন্য, বাংলাদেশের যেকোনো মানুষ চাইলে যে কোনো সময় সাহায্য নিতে পারেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *