সুদানের যুদ্ধ: অ্যানিমেটেড মানচিত্রে দুই বছরের বিভীষিকা
গত দুই বছর ধরে সুদানে চলা সহিংস সংঘাতের চিত্র এখন অ্যানিমেটেড মানচিত্রের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে এই মানচিত্রগুলোতে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি, বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এবং মানবিক বিপর্যয়ের একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই অস্থিরতা বাড়তে শুরু করে। এরপর সুদানিজ সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চরম আকার ধারণ করে, যা ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়।
এই দুই পক্ষের মধ্যেকার সংঘর্ষে খার্তুমসহ (Khartoum) দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পরে।
মানচিত্রগুলো যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, শুরুতে উভয়পক্ষের মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলে সীমিত আকারে সংঘর্ষ চললেও, ধীরে ধীরে তা দেশের অভ্যন্তরে বিস্তৃত হয়।
বিশেষ করে রাজধানী খার্তুমে উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়, যা শহরের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। একইসঙ্গে, দারফুর (Darfur)-এর মতো অঞ্চলে জাতিগত সংঘাত নতুন করে মাথাচাড়া দেয় এবং মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়ে।
মানচিত্রগুলোতে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও দেখানো হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের কারণে মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এই অ্যানিমেটেড মানচিত্রগুলো শুধু যুদ্ধের গতিপথই দেখায় না, বরং এর পেছনে থাকা রাজনৈতিক কারণগুলোকেও তুলে ধরে। ক্ষমতার লড়াই, জাতিগত বিভাজন এবং অর্থনৈতিক সংকট—এগুলো সবই সুদানের এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের মূল কারণ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানালেও, এখন পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে, সুদানে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, বিবদমান পক্ষগুলোর অনমনীয় মনোভাবের কারণে আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
ফলে, দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। অ্যানিমেটেড মানচিত্রগুলো সুদানের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে, যা শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা