আন্না পলিটকোভস্কায়ার সাহস: আমি কি পারতাম?

সাংবাদিকতার কঠিন পথে: সত্য উন্মোচনের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের আত্মত্যাগের গল্প নতুন নয়।

বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে, তাঁরা প্রায়ই নিজেদের জীবন বাজি রাখেন, খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁদের ওপর নেমে আসে চরম বিপদ। সম্প্রতি মুক্তি পেতে যাওয়া একটি চলচ্চিত্রের সূত্রে সাংবাদিকদের এই সাহস ও আত্মত্যাগের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

‘ওয়ার্ডস অফ ওয়ার’ নামের এই চলচ্চিত্রে রুশ সাংবাদিক আনা পোলিতকভস্কায়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ম্যাক্সিন পিক। পোলিতকভস্কায়া ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক, যিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে রাশিয়ার ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।

সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার বিষয়টি বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত খবর সংগ্রহের সময় ১,৮০০ জনের বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন।

শুধু ২০২৪ সালেই নিহত হয়েছেন ১২৪ জন, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ সাংবাদিক।

এছাড়াও, ২০২৩ সাল থেকে নারী সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও বেড়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি, শারীরিক নিগ্রহ, হুমকি এবং ভয় দেখানোর মতো ঘটনাগুলো এখন প্রায়ই ঘটছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোতেও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করার এবং সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।

ব্রিটেনেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সাংবাদিকরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

জন অ্যাডামস-এর ভাষায়, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।” সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হলে, তা কেবল তাঁদের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।

সুতরাং, সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাঁদের কাজকে সমর্থন করা, তাঁদের প্রকাশিত সংবাদ শেয়ার করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখে দেওয়া উচিত।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস (৩ মে) উপলক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সংস্থাকে সহায়তা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, যখনই আপনি কোনো দুর্নীতি, অবিচার বা চরমপন্থার খবর দেখেন, তখন এর পেছনে হয়তো এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি আপনার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *