বরফের নিচে এক অচেনা জগৎ! বিজ্ঞানীরা যা দেখলেন, শুনলে চমকে যাবেন!

আন্টার্কটিকার বরফের নিচে বয়ে যাওয়া এক রহস্যময় নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বিজ্ঞানীরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রতি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।

আন্টার্কটিকা, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত একটি বিশাল মহাদেশ, যা পুরু বরফের চাদরে ঢাকা। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই বরফের নিচে লুকিয়ে থাকা জগৎ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। অত্যাধুনিক রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা বরফের স্তর ভেদ করে পাহাড়, উপত্যকা এবং নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই নদীগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে, অর্থাৎ উপরের দিকেও প্রবাহিত হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যখন এই বরফের স্তর গলতে শুরু করবে, তখন এই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে এবং এর বিস্তার বাড়বে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল হিমবাহগুলো আরও দ্রুত গলতে শুরু করবে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবাহ বিষয়ক জলবিদ ক্রিস্টিন ডও-এর নেতৃত্বে একটি দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। ডও-এর মতে, “পরিবর্তনগুলো খুবই মারাত্মক হতে চলেছে।

আমরা হয়তো আগামী ৮০ বছরে কতটা বরফ গলবে, তা এখনো পর্যন্ত সঠিকভাবে অনুমান করতে পারিনি।”

গবেষণায় দেখা গেছে, আন্টার্কটিকার দ্রুত গতিতে চলমান হিমবাহগুলোর নিচে প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে, যা বরফের স্তরকে পিচ্ছিল করে তোলে এবং তাদের দ্রুত গলতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, থোয়েটস এবং পাইন আইল্যান্ড নামের দুটি অস্থির হিমবাহের নিচে আগ্নেয়গিরি এবং উপত্যকা থাকায় ভূ-তাপীয় কারণে প্রচুর জল তৈরি হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গবেষণা আন্টার্কটিকার বরফের প্রান্তভাগে অস্বাভাবিক হারে বরফ গলনের কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে। উপগ্রহ চিত্রগুলোতে দেখা যায়, সমুদ্রের কাছাকাছি কিছু অঞ্চলে বরফ দ্রুত গলছে, যা সমুদ্রের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের নিচ থেকে আসা নদীগুলো এই গলন প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এই নদীগুলো থেকে আসা মিষ্টি জল যখন সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সঙ্গে মিশে যায়, তখন একটি বিশেষ প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়ায় উষ্ণ, লবণাক্ত জল উপরের দিকে উঠে আসে এবং বরফের সংস্পর্শে এসে গলন প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই নদীর প্রভাব যদি বর্তমান জলবায়ু মডেলগুলোতে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, টটেন হিমবাহের কথা উল্লেখ করে তাঁরা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এই হিমবাহ থেকে অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ বরফ গলতে পারে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ একটি নিচু ভূমি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের সামান্য উচ্চতা বৃদ্ধিতেও দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমিয়ে আনা যায়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *