পৃথিবীর শেষে ম্যারাথন: এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সাক্ষী!

**বরফের রাজ্যে ম্যারাথন জয়: প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একদল মানুষের অদম্য স্পৃহা**

পৃথিবীর একেবারে শেষ প্রান্তে, যেখানে সূর্যের আলোও দুর্বল, সেখানে একদল মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি যেন নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তারা কোনো সাধারণ মানুষ নয়, বরং তারা ছিলেন চরম প্রতিকূলতাকে জয় করার এক অদম্য যোদ্ধা।

এই গল্পটি তাদের, যারা অ্যান্টার্কটিকার বরফ আচ্ছাদিত প্রান্তরে ম্যারাথন দৌড়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

২০২৫ সালের মার্চ মাসের এক সকালে, আবহাওয়া ছিল বেশ প্রতিকূল। তীব্র ঠান্ডা, সেই সাথে দমকা হাওয়া।

প্রতিকূলতা ছিল যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু তাদের মনোবল ছিল ইস্পাত কঠিন। এই পরিস্থিতিতেই শুরু হয় অ্যান্টার্কটিকা ম্যারাথন।

এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল কিং জর্জ দ্বীপে।

এই দ্বীপে পৌঁছানোও ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

আট দিন ধরে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। সমুদ্রের ঢেউ এতটাই তীব্র ছিল যে অনেক সময় জাহাজের আরোহীদের অসুস্থ করে তুলেছিল।

যাত্রা পথে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সময় জাহাজের মধ্যেই তারা একে অপরের সঙ্গে গল্প করেছেন, নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন।

বিভিন্ন দেশের ১৫১ জন দৌড়বিদ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন পেশা ও বয়সের মানুষ।

এই ম্যারাথনে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষেরই ছিল আলাদা গল্প।

কেউ এসেছেন নিজের সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে, কেউ আবার এসেছেন অন্য মহাদেশে ম্যারাথন দৌড়ের চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করতে।

ভারতের প্রথম দম্পতি হিসেবে সুধাকর এবং তুলসী টোলা এই দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন।

তাদের লক্ষ্য ছিল, একসঙ্গে সাতটি মহাদেশে ম্যারাথন সম্পন্ন করার রেকর্ড গড়া।

ক্যামেরুনের আফোয়ারি ফনজেনুই নামের একজন দৌড়বিদ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এই দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেন।

দৌড়ের দিন, প্রকৃতির রুদ্র রূপ যেন আরও কঠিন হয়ে দেখা দেয়।

বরফের চাদরে মোড়া প্রান্তরে দৌড় শুরু হয়।

তীব্র বাতাস আর কঠিন পথ তাদের শরীরকে ক্লান্ত করে দিচ্ছিল, কিন্তু তাদের মনের জোর ছিল অটুট।

একদিকে যেমন ছিল ঠান্ডা, তেমনই ছিল শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। এই পরিস্থিতিতেও তারা একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।

প্রতিযোগিতার শেষে, বিজয়ী হওয়ার আনন্দ ছাপিয়ে গিয়েছিল তাদের কঠোর পরিশ্রমের স্মৃতি।

তারা শুধু একটি ম্যারাথন দৌড় সম্পন্ন করেননি, তারা যেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিজেদের জয়ী করেছেন।

এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

অ্যান্টার্কটিকার এই ম্যারাথন যেন প্রমাণ করে, মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *