১১ টাকার টিকিট: অপেরায় বিপ্লব ঘটিয়ে দর্শকদের মন জয় করলেন এই শিল্পী!

ফিলাডেলফিয়ার একটি অপেরা সংস্থা, যার আর্থিক সঙ্কট প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন শিল্পী অ্যান্টনি রথ কস্টানজো।

তিনি টিকিটের দাম কমিয়ে এবং অভিনব কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। এর ফলে শুধু দর্শকই বাড়েনি, বরং সংস্থার আর্থিক অবস্থাও ফিরে এসেছে।

গত বছর, যখন এই অপেরা সংস্থাটি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে, তখন কস্টানজো এর দায়িত্ব নেন।

তিনি এসে প্রথমেই টিকিটের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনেন। সাধারণত অপেরার টিকিট বেশ দামি হয়ে থাকে, কিন্তু কস্টানজো ‘নিজের পছন্দ মতো দাম দিন’ – এই নীতি চালু করেন, যেখানে মাত্র ১১ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৩০০ টাকার মতো) টিকিট কেনার সুযোগ ছিল।

এই সিদ্ধান্তের ফলে দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়। পুরনো পদ্ধতিতে যেখানে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৮ শতাংশ, সেখানে এই নতুন নীতির কারণে সংস্থাটি দ্রুত প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৭ কোটি টাকা) অনুদান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

এর ফলস্বরূপ, আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক দর্শক টিকিট কাটেন এবং প্রায় ২.৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৬ কোটি টাকা) উদ্বৃত্ত থাকে।

কস্টানজো শুধু টিকিটের দাম কমানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি অপেরার দর্শকদের জন্য নতুনত্বের ছোঁয়া নিয়ে আসেন।

ঐতিহ্যবাহী অপেরার বাইরে গিয়ে, তিনি এমন কিছু পরিবেশনার ব্যবস্থা করেন যা আগে দেখা যায়নি।

এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রযোজনা, যেমন – রোজিনির ‘ইল ভিয়াজ্জিও আ রেইমস’, যেখানে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে একটি আর্ট গ্যালারিতে রূপান্তরিত করা হয়।

এছাড়াও, তিনি মাল্টিমিডিয়া পরিবেশনা, নতুন সুর ও গল্পের অপেরা এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক পরিবেশনার ব্যবস্থা করেন।

কস্টানজোর মতে, এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল অপেরাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছি অপেরাকে আরও সহজলভ্য করতে, যাতে সবাই এর স্বাদ নিতে পারে।”

সংস্থার সঙ্গীত পরিচালক কোরাডো রভারিস, এই পরিবর্তনের সাক্ষী ছিলেন।

তিনি জানান, “দর্শকদের মধ্যে যে উৎসাহ দেখেছি, তা অসাধারণ ছিল। সবাই যেন নতুন কিছু উপভোগ করতে এসেছিল।”

এই পরিবর্তনের ফলে শুধু আর্থিক উন্নতিই হয়নি, বরং অপেরার দর্শক-সংখ্যারও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে।

যারা আগে কখনো অপেরা দেখেননি, তাদের অনেকেই এই সুযোগে টিকিট কিনেছেন।

নতুন দর্শকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তরুণ প্রজন্মের, যাদের বয়স ছিল ৪৫ বছরের নিচে।

তবে, এই সাফল্যের পরেও, অপেরা আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক স্কোরকা সতর্ক করে বলেন, “এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

তবে, তারা যে সাহসিকতার সঙ্গে এই পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই উদ্যোগ থেকে তারা এবং শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যরা অনেক কিছু শিখতে পারবে।”

বর্তমানে, অপেরা সংস্থাটি তাদের ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে।

কস্টানজোর পরিকল্পনা হলো, আগামী দিনেও দর্শকদের জন্য আরও নতুন এবং আকর্ষণীয় কিছু পরিবেশনা নিয়ে আসা।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *