ড্রোন: বাড়ছে বিপদ, রুখতে কি প্রস্তুত বাংলাদেশ?
বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, যা একদিকে যেমন বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনই নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগও বাড়ছে। উড়ন্ত এই যন্ত্রগুলো এখন শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ, এমনকি নাশকতামূলক কাজের উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
সম্প্রতি, ড্রোন ব্যবহারের এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জনসমাগম পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থা তৈরি ও সেগুলোর ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে। এইসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ড্রোনকে আকাশেই ধ্বংস করা, তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কারিগরি হস্তক্ষেপ করা, অথবা সিগন্যাল জ্যাম করে সেগুলোকে অচল করে দেওয়া।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোনো সিস্টেম ড্রোনকে ভূপাতিত করতে ক্ষেপণাস্ত্র বা জাল ব্যবহার করে। আবার, কিছু প্রযুক্তি আছে যা ড্রোনগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রকের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
তবে, এইসব পদ্ধতির কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিগন্যাল জ্যামিং পদ্ধতিতে ড্রোন অচল করা গেলেও এর ফলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে আশেপাশে থাকা মানুষ বা সম্পত্তির ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
ইসরায়েলি কোম্পানি ডি-ফেন্ড সলিউশনস-এর তৈরি ‘এনফোর্সএয়ার’ নামক একটি সিস্টেম ড্রোন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রযুক্তি সরবরাহ করে। এই সিস্টেমটি একটি রাউটারের মতো দেখতে, যা সহজেই বহনযোগ্য এবং ড্রোন শনাক্ত করে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খুব শীঘ্রই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পাইপলাইন, সমুদ্রবন্দর এবং জনবহুল এলাকা রক্ষার জন্য ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থাগুলো আরও বেশি ব্যবহৃত হবে। তবে, এর জন্য প্রয়োজন বিদ্যমান আইনগুলোর সংস্কার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
তাহলে, বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আমাদের দেশেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা এবং জনসমাগমের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ড্রোন-বিরোধী প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে ড্রোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশের আকাশসীমা এবং জনজীবনের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, ড্রোন বিষয়ক নীতিমালা তৈরি এবং এর উপযুক্ত প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
একইসঙ্গে, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতন করা এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি এর নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস