বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা কমে যাওয়ায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা অতিজীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ছে, এমনটাই উঠে এসেছে এক নতুন গবেষণায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারাত্মক ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ অপ্রতুল।
এই পরিস্থিতিতে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মারাত্মক ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণ (drug-resistant infections) হওয়া রোগীদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পান। ল্যান্সেট ইনফেকশাস ডিজিজেস (Lancet Infectious Diseases) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতার অভাবে একদিকে যেমন রোগীর মৃত্যু বাড়ছে, তেমনি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)-এর বিস্তার ঘটছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তথ্যমতে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণাটিতে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশগুলোতে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী গ্রাম-নেগেটিভ (সিআরজিএন) সংক্রমণের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এই সংক্রমণ ফুসফুস, রক্ত এবং মূত্রনালীর জটিলতা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে এই আটটি দেশে প্রায় ১৫ লাখ সিআরজিএন সংক্রমণ এবং প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অথচ, সিআরজিএন-এর বিরুদ্ধে কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা গেছে মাত্র ৬.৯ শতাংশ রোগীর জন্য।
কেনিয়াতে এই হার ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ, যেখানে মেক্সিকো ও মিশরে তা ১৪.৯ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ‘গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ (গার্ডপ)-এর পরিচালক ড. জেনিফার কোহন বলেন, “উন্নত দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া হলেও, দরিদ্র দেশগুলোতে এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে।”
তাঁর মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব কেবল রোগীদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর হারই বাড়াচ্ছে না, বরং এটি এএমআর-এর বিস্তারেও সহায়ক হচ্ছে। কারণ, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক না পাওয়ায় চিকিৎসকরা অন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা এইচআইভি (HIV)-এর চিকিৎসার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক সহজলভ্য করার জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে এবং নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
অধ্যাপক অ্যালিসন হোমস (University of Liverpool)-এর মতে, এই গবেষণা অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, “যদি অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতিগুলো দ্রুত সমাধান করা না হয়, তাহলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বোঝা বাড়তে থাকবে, যা প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি করবে এবং রোগীদের স্বাস্থ্য আরও খারাপ করে তুলবে।”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান