বাসায় কম্পোস্ট করা কি কঠিন? জেনে নিন সহজ কৌশল!

শিরোনাম: কম্পোস্টিং: বাংলাদেশের মাটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক সহজ উপায়

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও এই দূষণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে।

বিশেষ করে, শহরের আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এই পরিস্থিতিতে, কম্পোস্টিং বা জৈব সার তৈরি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এটি একদিকে যেমন বর্জ্য হ্রাস করে, তেমনি মাটির উর্বরতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি প্রতিবেদন অবলম্বনে, আসুন জেনে নিই কীভাবে সহজে এই কাজটি করা যায়।

কম্পোস্টিং আসলে প্রকৃতির এক অসাধারণ প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে, ফল ও সবজির খোসা, বাসি খাবার, এমনকি শুকনো পাতা ও অন্যান্য জৈব বর্জ্যকে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই সার মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করে এবং গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এছাড়া, কম্পোস্টিং-এর মাধ্যমে আমরা ল্যান্ডফিলের পরিমাণ কমাতে পারি, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আমাদের অনেকেরই ধারণা, কম্পোস্টিং-এর জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন। কিন্তু এটি ভুল ধারণা।

শহরের ফ্ল্যাট-বাড়িতে বসবাসকারীরাও খুব সহজে এই কাজটি করতে পারেন। শুরু করার জন্য, আপনার প্রয়োজন কিছু সাধারণ জিনিস—যেমন, একটি বায়ুরোধী পাত্র এবং কিছু জৈব বর্জ্য।

ফল ও সবজির খোসা, ডিমের খোসা, চা পাতা, কফি তৈরির পর অবশিষ্ট অংশ—এগুলো সবই কম্পোস্টিং-এর উপযোগী।

কম্পোস্টিং শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, একটি পাত্রে এইসব বর্জ্য সংগ্রহ করা। বর্জ্যের দুর্গন্ধ এড়াতে, আপনি এই পাত্রটি ফ্রিজে রাখতে পারেন।

এছাড়াও, বাজারে কম্পোস্ট বিন পাওয়া যায়। আপনি চাইলে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।

কম্পোস্ট তৈরির প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। সংগৃহীত বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পচন ধরে এবং সারে পরিণত হয়। এই সার গাছের গোড়ায় ব্যবহার করা যায়, যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

বর্তমানে, অনেক শহরেই কম্পোস্ট সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে আপনি আপনার তৈরি করা সার জমা দিতে পারেন।

এছাড়াও, কিছু সংস্থা বাড়ি থেকে কম্পোস্ট সংগ্রহ করার পরিষেবা দিয়ে থাকে।

কম্পোস্টিং-এর মাধ্যমে আমরা কেবল পরিবেশের উপকার করি না, বরং নিজের খাদ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে পারি। বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় কম্পোস্ট ব্যবহার করে সবজি চাষ করা সম্ভব। এতে বাজারের রাসায়নিক সার মিশ্রিত সবজির পরিবর্তে, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম্পোস্টিং-এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একদিকে যেমন কার্বন নিঃসরণ কমায়, তেমনি মাটির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। ল্যান্ডফিলে জমা হওয়া বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। কম্পোস্টিং-এর মাধ্যমে এই মিথেন গ্যাস উৎপাদন কমানো সম্ভব।

সুতরাং, আসুন, আমরা সবাই কম্পোস্টিং-এর গুরুত্ব বুঝি এবং এই মহৎ কাজে নিজেদের যুক্ত করি। আপনার সামান্য প্রচেষ্টা, পরিবেশের জন্য বয়ে আনতে পারে বিশাল পরিবর্তন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *