আতঙ্কের খবর! বাড়ছে এপেন্ডিক্স ক্যান্সারের ঝুঁকি, মিলিনিয়ালদের মাঝে উদ্বেগ!

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের ঝুঁকি, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের।

যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আগের প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান প্রজন্মের (জেনারেশন এক্স ও সহস্রাব্দী) মানুষের মধ্যে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গবেষণাটি বলছে, এই ক্যান্সার শনাক্তের হার তাদের বাবা-মায়ের প্রজন্মের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।

চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

‘অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৪১ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের তুলনায়, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে এই ক্যান্সারের প্রবণতা তিন গুণের বেশি এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে চার গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণাটির প্রধান লেখক, ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক ড. আন্ড্রিয়ানা হলোওয়াটাইজ এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সাধারণত পাকস্থলী, কোলন ও রেক্টাম ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা দেখি। অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার বিরল হলেও, এর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা সত্যিই উদ্বেগের।”

অ্যাপেন্ডিক্স, যা আমাদের পেটের ডান দিকে অবস্থিত, ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। যদিও অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে বিরল, প্রতি বছর প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ থেকে ২ জনের এই রোগ হতে দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা এই সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় ফেলেছে।

এই গবেষণায় ঠিক কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তা সরাসরি বলা হয়নি। তবে গবেষকরা মনে করছেন, পরিবেশগত কিছু বিষয় এর জন্য দায়ী হতে পারে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত ওজনের মতো বিষয়গুলো এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ড. হলোওয়াটাইজ আরও জানান, “কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই সম্ভবত কিছু সাধারণ ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা এই ক্যান্সারগুলির জন্য দায়ী।”

ডা. এন্ড্রিয়া সেরেকের মতে, যারা মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের সেন্টার ফর আর্লি অনসেট কোলোরেক্টাল অ্যান্ড জিআই ক্যান্সার-এর কো-ডাইরেক্টর, “আমরা জানি যে অল্প বয়সে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার হওয়া, অল্প বয়সে হওয়া অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পাকস্থলী ও অন্ত্র) ক্যান্সারের একটি অংশ।”

এই প্রসঙ্গে, ব্রুকলিনের বাসিন্দা ক্রিস উইলিয়ামসের কথা বলা যায়। তিনি ২০১৮ সালে ৪৭ বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয়। উইলিয়ামস জানান, ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পরে তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নেন এবং বর্তমানে তিনি ক্যান্সারমুক্ত জীবন যাপন করছেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটি ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল। কারণ এর মাধ্যমেই আমি ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পারি এবং সময়মতো চিকিৎসা নিতে সক্ষম হয়েছি।”

অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট স্ক্রিনিং পদ্ধতি নেই। সাধারণত, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের (অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ) চিকিৎসার সময় এটি ধরা পড়ে। এই ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো পেট বা শ্রোণী অঞ্চলে ব্যথা, পেট ফোলা, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।

ক্যান্সার যদি ছড়িয়ে যায়, তাহলে কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার বিরল, তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর বৃদ্ধি পাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। এছাড়া, শরীরের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *