শিরোনাম: অ্যাপেলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মাঝে
প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া অ্যাপেলের বিশ্বব্যাপী ডেভেলপার সম্মেলন (Worldwide Developers Conference – WWDC) প্রযুক্তি বিশ্বে সবসময় আলোচনার জন্ম দেয়। এই সম্মেলনে অ্যাপেল তাদের নতুন সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ঝলক দেখায়, যা বিনিয়োগকারী এবং অ্যাপ নির্মাতা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এবারের WWDC-তে উদ্ভাবনের চমক ছিল কিছুটা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে অ্যাপেলের প্রধান আকর্ষণ ছিল তাদের ‘লিকুইড গ্লাস’ ডিজাইন, যা মূলত ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা যোগ করার চেষ্টা।
তবে প্রযুক্তি প্রেমীদের মূল আগ্রহ ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) নিয়ে অ্যাপেলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। গত বছর, অ্যাপেল তাদের উন্নত ‘সিরি’ (Siri) -র ঘোষণা করেছিল, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু এবারকার সম্মেলনে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
সম্মেলনে অ্যাপেলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, উন্নত ‘সিরি’র বৈশিষ্ট্যগুলো এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি এবং এই প্রযুক্তির মান উন্নত করতে আরও সময় প্রয়োজন।
এই ঘোষণার পর, প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কারণ, বাজারে বর্তমানে AI প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ হচ্ছে এবং গুগল, মেটা ও ওপেনএআই-এর মতো কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, অ্যাপেলের এই ধীরগতি অনেক বিনিয়োগকারীর উদ্বেগের কারণ হয়েছে। সোমবারের শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে, যেখানে অ্যাপেলের শেয়ারের দাম সামান্য কমে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপেল তাদের AI প্রযুক্তির উন্নতিতে কিছুটা রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করেছে।
তারা এমন কোনো পণ্য বাজারে আনতে চাইছে না যা এখনো শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। অ্যাপেলের এই কৌশল তাদের অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি প্রয়াস।
স্মার্টওয়াচ বা ট্যাবলেটের মতো নতুন প্রযুক্তি বাজারে আনার ক্ষেত্রেও অ্যাপেল একই কৌশল অবলম্বন করেছিল এবং পরবর্তীতে এই দুটি বিভাগে তারা শীর্ষস্থান অর্জন করে।
তবে, প্রযুক্তি বিশ্লেষক ড্যান আইভস মনে করেন, অ্যাপেলের জন্য দ্রুত এই খাতে উন্নতি করা অপরিহার্য।
তিনি উল্লেখ করেন, সম্ভবত অ্যাপেলকে তাদের AI কৌশলকে আরও শক্তিশালী করতে অন্য কোনো কোম্পানির অধিগ্রহণ করতে হতে পারে।
বাজারে টিকে থাকতে হলে, অ্যাপেলকে খুব দ্রুত তাদের AI প্রযুক্তি উন্নত করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজারের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তাহলে এখানেও স্মার্টফোন এবং অন্যান্য গ্যাজেটের ব্যবহার বাড়ছে।
তাই, অ্যাপেলের AI প্রযুক্তির অগ্রগতি বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি অ্যাপেল তাদের AI উন্নত করতে পারে, তাহলে তা শুধু তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাবে না, বরং স্থানীয় ডেভেলপারদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলা ভাষায় তৈরি হওয়া AI মডেলগুলির উন্নতিতে এটি সহায়তা করতে পারে।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বর্তমানে AI প্রযুক্তি এখনো তার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা দেখাতে পারেনি।
বিভিন্ন উন্নত AI মডেল তৈরি হলেও, জটিল সমস্যা সমাধানে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন