অ্যাপলের নতুন আইফোন: আকর্ষণ ধরে রাখতে পারবে কি?
আগামী ৯ই সেপ্টেম্বরের সম্ভাব্য তারিখে অ্যাপল তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে নতুন আইফোন উন্মোচন করতে পারে। শোনা যাচ্ছে, এবারের মডেলটির নাম হতে পারে ‘আইফোন এয়ার’ এবং এর সাথে আইফোন ১৭ ও নতুন অ্যাপল ওয়াচও বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন ডিজাইনটি ২০১৭ সালের আইফোন এক্স-এর পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
আইফোন এক্স-এর পর থেকে, অ্যাপল তাদের ডিজাইন এবং প্রযুক্তিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে, হোম বাটন বাদ দেওয়া এবং ফেস আইডি-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়। তবে, ‘আইফোন এয়ার’ সম্ভবত বাজারের অন্য চাহিদাগুলো পূরণ করবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে, যারা কিছুটা আলাদা কিছু চান।
বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, নতুনত্ব এবং আকর্ষণ ধরে রাখাটা অ্যাপলের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রাহকরা এখন আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে তাদের ফোন পরিবর্তন করছেন, কারণ নতুন ফিচারের আকর্ষণ কমছে।
অন্যদিকে, গুগল এবং স্যামসাং-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো তাদের স্মার্টফোনগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর জোর দিচ্ছে। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাপল তাদের আসন্ন অনুষ্ঠানে এআই-এর চেয়ে হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশের উন্নতিতে বেশি মনোযোগ দেবে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপলের সম্ভবত এখনই এআই প্রযুক্তি সেভাবে প্রস্তুত নয়, যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারে। তবে, তাদের দ্রুত এ বিষয়ে উন্নতি করতে হবে, কারণ স্যামসাং এবং গুগলের মতো প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে এআই-এর সুবিধা নিয়ে এসেছে।
এ বছর, অ্যাপল সম্ভবত তাদের পুরনো কিছু সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। যেমন, তারা তাদের ‘সiri’কে আরও উন্নত করতে চাইছে, যাতে এটি বিভিন্ন অ্যাপের মধ্যে কাজ করতে পারে এবং ফোনের স্ক্রিনে থাকা বিষয়গুলো সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন করতে পারে।
এই ফিচারটি গুগলের জেমিনি এবং ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটির মতো উন্নত এআই-এর কাছাকাছি আসবে।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক জানিয়েছেন, তারা তাদের ডিভাইস এবং প্ল্যাটফর্মে এআই যুক্ত করছেন এবং এতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছেন। তবে, আন্তর্জাতিক ডেটা কর্পোরেশন (আইডিসি)-এর একজন পরিচালক নাবিলা পোপাল এর মতে, এআই এখনো গ্রাহকদের নতুন ফোন কিনতে উৎসাহিত করতে পারছে না।
অন্যদিকে, স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলের অবস্থান এখনো বেশ শক্তিশালী। আইডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারে তাদের মার্কেট শেয়ার ১৫.৭%, যা স্যামসাং-এর ঠিক পরেই।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যাপল সম্ভবত তাদের ফোনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নতি করবে, যেমন ব্যাটারির ক্ষমতা, ক্যামেরার গুণমান এবং ডিজাইন।
এছাড়াও, দামের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, বাণিজ্য শুল্কের কারণে নতুন আইফোনের দাম বাড়বে কিনা, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, অ্যাপল তাদের কিছু মডেলের দাম বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা আইফোন ১৭ প্রো-এর স্টোরেজ সংস্করণ কমিয়ে দিতে পারে, যা গ্রাহকদের আরও বেশি দামি মডেলগুলো কিনতে উৎসাহিত করবে।
তবে, বাজারে টিকে থাকতে হলে অ্যাপলকে দামের বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, সাধারণত, একটি নতুন ফোনের দাম নির্ধারণ করার সময়, অ্যাপল দীর্ঘ সময়ের জন্য সেই দাম ধরে রাখে।
অতীতে, অ্যাপল ‘আইফোন মিনি’ এবং ‘আইফোন প্লাস’-এর মতো কিছু মডেলের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। এবার ‘আইফোন এয়ার’ মডেলটি বাজারে কতটা সাড়া ফেলবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তবে, অ্যাপলের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, তাদের ‘ম্যাকবুক এয়ার’ এবং ‘আইপ্যাড এয়ার’-এর মতো মডেলগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
তাই, একটি হালকা ও পাতলা ‘আইফোন এয়ার’-এর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন