শিরোনাম: ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ, অ্যাপলের সংকট এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জেরে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের (Apple) ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শেয়ার বাজারে, যা বিনিয়োগকারীদের, বিশেষ করে অবসরকালীন সঞ্চয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন এই পরিস্থিতির দিকে গভীর মনোযোগ রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধ ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়, যা পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে তীব্র বাণিজ্য বিরোধের সৃষ্টি করে।
অ্যাপল, যাদের উৎপাদন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরশীল, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোম্পানির শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপলের ব্যবসা মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা মুনাফাকে কমিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে জটিলতা, যা অ্যাপলের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিকের অবসরকালীন সঞ্চয়, যেমন 401(k)-এর (যা বাংলাদেশের পেনশন স্কিমের মতো) উপরও এর প্রভাব পড়ছে। 401(k) মূলত একটি অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্প, যেখানে কর্মীরা তাদের উপার্জনের একটি অংশ জমা করেন এবং বিভিন্ন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন।
যেহেতু অ্যাপল এসএন্ডপি ৫০০ সূচকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এর শেয়ারের দর পতন সূচকটিকেও প্রভাবিত করছে, যা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করছে। এসএন্ডপি ৫০০ হলো যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা দেশটির বৃহৎ ৫০০টি কোম্পানির শেয়ারের গড় মূল্য নির্দেশ করে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কারণ, শেয়ার বাজারের উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে সাধারণত ভালো ফল পাওয়া যায়। তারা বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওকে (বিনিয়োগের ক্ষেত্র) বৈচিত্র্যপূর্ণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে একটি খাতের ক্ষতির প্রভাব অন্য খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কমানো যায়।
এছাড়াও, বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল এখনো একটি শক্তিশালী কোম্পানি এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বায়নের যুগে, একটি দেশের অর্থনীতির দুর্বলতা অন্য দেশের বাজারকেও প্রভাবিত করতে পারে।
তাই, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরও বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে এবং তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে, বাজারের পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝে এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন