এপ্রিল ফুলস ডে: বিশ্বজুড়ে হাস্যরসের মোড়কে ছলনার দিন।
প্রতি বছর ১লা এপ্রিল তারিখে সারা বিশ্বে পালিত হয় এপ্রিল ফুলস ডে। এই দিনে মানুষজন একে অপরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা ও কৌতুক করে থাকে, যা অনেক দেশে একটি ঐতিহ্য হিসেবে পালিত হয়।
এই দিনের মূল ধারণা হলো, মানুষকে বোকা বানিয়ে মজা করা।
এপ্রিল ফুলস ডে’র উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। এর একটি সম্ভাব্য উৎস হলো ষোড়শ শতকে ফ্রান্সে নববর্ষের ক্যালেন্ডার পরিবর্তন।
আগে নববর্ষ উদযাপিত হতো ২৫শে মার্চ থেকে, যা এক সপ্তাহ ধরে চলত। কিন্তু রাজা নবম চার্লস এই উৎসব ১লা জানুয়ারিতে নিয়ে আসেন।
যারা এই পরিবর্তনের কথা জানতে পারেনি, তাদের এপ্রিল মাসের ১ তারিখে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হতো। এছাড়াও, অনেকে মনে করেন, এই দিনের সম্পর্ক রয়েছে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পরিবর্তনের সঙ্গে।
আবার কারো কারো মতে, ২১শে মার্চের বসন্ত বিষুবের দিনের আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের সঙ্গেও এর যোগসূত্র থাকতে পারে।
এপ্রিল ফুলস ডে’র ইতিহাসে বেশ কিছু বিখ্যাত কৌতুকের ঘটনা রয়েছে। যেমন, ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওয়াশিংটনের একটি ফ্লাইটে “Jasmine” নাম দিয়ে একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টের ছদ্মবেশ ধারণ করেন এবং যাত্রীদের মধ্যে আইসক্রিম বিতরণ করেন।
কিছুক্ষণ পর তিনি আসল রূপে ফিরে এসে সবাইকে “এপ্রিল ফুল!” বলে চমকে দেন। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনও তাদের প্রতিষ্ঠাকালে এপ্রিল ফুলস ডে’তে বিভিন্ন হাস্যকর ঘোষণা করতেন।
একবার তারা ঘোষণা করেছিলেন, চাঁদে একটি গবেষণা কেন্দ্র খোলা হবে, আবার অন্যবার তাদের সার্চ ইঞ্জিনে “ঘ্রাণ নেওয়ার” সুবিধা যুক্ত করার কথা বলেছিলেন। ১৯৯২ সালে, এনপিআরের “টক অফ দ্য নেশন” অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।
সারা বিশ্বে এপ্রিল ফুলস ডে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। ফ্রান্সে একে “পয়সন দ্য এপ্রিল” (এপ্রিলের মাছ) বলা হয় এবং এখানে বন্ধুদের পিঠে কাগজের মাছ লাগানোর রীতি প্রচলিত আছে।
স্কটল্যান্ডে এই উৎসব দুই দিন ধরে চলে, যেখানে ১লা এপ্রিল “গাউকি ডে” বা “হান্ট দ্য গওক” হিসেবে পরিচিত, যেখানে এপ্রিলের ২ তারিখে কৌতুকগুলো আরও শারীরিক রূপ নেয়। আইসল্যান্ডেও এই দিনটি পালিত হয়, যেখানে মানুষকে বোকা বানিয়ে অন্য স্থানে পাঠানো হয়।
এপ্রিল ফুলস ডে’র উদযাপন একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতি, যেখানে কৌতুক এবং হালকা ধরনের ঠাট্টার মাধ্যমে মানুষ আনন্দ উপভোগ করে। যদিও এর উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস এখনো অজানা, তবে এটি বছরের পর বছর ধরে মানুষের মধ্যে হাসিখুশির একটি উপলক্ষ হয়ে রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস