আশ্চর্য আবিষ্কার! আকাশে ওড়ার প্রমাণ আদি পাখির জীবাশ্মে

আর্কিওপ্টেরিক্স: পাখির বিবর্তনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন।

প্রায় ১৫ কোটি বছর আগের, জুরাসিক যুগের এক পাখির জীবাশ্ম নিয়ে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টোরি-তে সংরক্ষিত ‘আর্কিওপ্টেরিক্স’ (প্রাচীনতম পাখি হিসেবে পরিচিত জীবাশ্ম) নামক পাখির জীবাশ্মে উড়বার ক্ষমতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মিলেছে।

Nature জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে, যা পাখি এবং ডাইনোসরের বিবর্তন সম্পর্কিত ধারণা আরও স্পষ্ট করবে।

আর্কিওপ্টেরিক্সের জীবাশ্ম নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন। এই পাখিটি দেখতে অনেকটা কাকের মতো ছিল এবং এর পালকযুক্ত ডানা ছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এটি হয়তো উড়তে পারতো, কিন্তু তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। এই জীবাশ্মটির বিশেষত্ব হলো, এটি ভালোভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় ছিল এবং এর মধ্যে পালকের গঠন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল।

গবেষকরা আলট্রাভায়োলেট (UV) আলো এবং কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT) স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে এই পাখির শরীরের অভ্যন্তরীণ গঠনও পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, জীবাশ্মটিতে ‘টার্শিয়াল’ (ডানার বিশেষ পালক) -এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আধুনিক পাখিদের উড়ানের জন্য এই পালকগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এতদিন পর্যন্ত আর্কিওপ্টেরিক্সে এই ধরনের পালকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, পায়ের আঙুলের আঁশ এবং মুখের ভেতরের হাড়ের গঠন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আর্কিওপ্টেরিক্স সম্ভবত মাটিতেও খাবার খুঁজে বেড়াতো এবং খুলির হাড়ের নড়াচড়ার (cranial kinesis) ক্ষমতা এর মধ্যে ছিল, যা পাখিদের ঠোঁট নাড়াচাড়ার সুবিধা দিত।

এই আবিষ্কারের ফলে আর্কিওপ্টেরিক্সের উড়বার ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পাখি সম্ভবত অল্প দূরত্বে উড়তে পারতো।

তবে আধুনিক পাখির মতো শক্তিশালী পেশি এবং বুকের খাঁচা না থাকায় এটি হয়তো বেশি সময় ধরে উড়তে সক্ষম ছিল না।

আর্কিওপ্টেরিক্সের জীবাশ্মটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা পাখি এবং ডাইনোসরের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করে। এই ধরনের জীবাশ্মের সংরক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এর মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি।

শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই জীবাশ্মটি বিবর্তন বিষয়ক গবেষণায় একটি নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *