আর্টিক সার্কেলে ট্রেন যাত্রা: প্রকৃতির এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা।
সুদূর উত্তরে, আর্কটিক সার্কেলের কাছাকাছি অবস্থিত সুইডেনের একটি গ্রাম, আবিস্কো। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রাতের আকাশে ঝলমলে আলোর খেলা, এই জায়গাটিকে করেছে অসাধারণ।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন এবং উত্তর মেরুর আলো দেখতে চান, তাদের জন্য আবিস্কো যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হলো, স্টকহোম থেকে আবিস্কো পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টার ট্রেন যাত্রা।
এই দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতির এক রূপকথার জগৎ। স্টকহোম সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছাড়ে ‘ভিওয়াই’ (Vy)-এর নরল্যান্ড নাইট ট্রেন, যা আর্কটিক সার্কেল ট্রেন নামেই পরিচিত।
পরের দিন সকাল ১১টায় ট্রেনটি যখন আবিস্কোতে পৌঁছায়, তখন যেন নতুন এক পৃথিবীর সূচনা হয়। ট্রেনের কামরাগুলোতে বসার সাধারণ সিট থেকে শুরু করে স্লিপিং বার্থের ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রত্যেক যাত্রীর জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়।
ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বরফের চাদরে মোড়া পাইন গাছের সারি আর সাদা বরফের দৃশ্য মন জুড়িয়ে দেয়। ট্রেনের খাবারগুলোও এখানকার সংস্কৃতির একটি অংশ।
নরল্যান্ড-এর স্থানীয় খাবার, যেমন – সুইডিশ মিটবল, আলু ভর্তা, এবং স্থানীয় ফল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদ পরিবেশন করা হয়। খাবারের স্বাদ যেন ভ্রমণের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।
আবিস্কোতে পৌঁছে আপনি প্রকৃতির আরও গভীরে যেতে পারবেন। এখানকার বরফের লেকের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, অথবা কুকুর টানা স্লেজে চড়ে বনের গভীরে ভ্রমণ করা – এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
এখানকার আদিবাসী ‘সামী’ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিও আপনাকে মুগ্ধ করবে। তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা, পোশাক এবং তাদের তৈরি খাবার- সবকিছুই অসাধারণ।
তবে, আবিস্কোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো রাতের আকাশের ‘নর্দার্ন লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি। রাতের আকাশে যখন সবুজ, নীল, বেগুনি আর হলুদের আলো খেলা করে, তখন মনে হয় যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব নৃত্য চলছে।
যারা ভাগ্যবান, তারা নাকি এই আলো ঝলমলে রাতের আকাশে তারা ভরা আকাশেও দেখতে পান।
আবিস্কো থেকে ফেরার পথেও একই রকম সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ফেরার পথে, অনেকে তাদের ব্যক্তিগত কেবিনে ভ্রমণ করেন, যেখানে আরামদায়ক ঘুমের ব্যবস্থা থাকে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই ট্রেনগুলো দূর-দূরান্তে ভ্রমণের এক দারুণ উদাহরণ। এটি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেয়, যা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে।
আর্টিক সার্কেলে এই ট্রেন যাত্রা শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার এক অসাধারণ সুযোগ। যারা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই যাত্রা একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার