হিমবাহের ভয়ঙ্কর দৃশ্য: ছবিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা!

আর্টিকের হিমবাহ: দ্রুত গলছে বরফ, বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত?

পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ। একদিকে যেমন বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, তেমনই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা।

সম্প্রতি, আর্টিক অঞ্চলের হিমবাহের দ্রুত গলন সেই বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেভাবে বরফ গলছে, তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হতে পারে।

নরওয়ের একটি দ্বীপপুঞ্জ, স্বালবার্ড-এ গিয়েছেন সুইডিশ ফটোগ্রাফার ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসলান্ড। তিনি এখানকার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ছবি তুলেছেন। একশো বছর আগের পুরনো ছবিগুলোর সঙ্গে বর্তমানের ছবি মিলিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে দ্রুত হারে এখানকার হিমবাহগুলো ছোট হয়ে আসছে।

১৯১৮ সালের একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি জাহাজ বিশাল একটি হিমবাহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অ্যাসলান্ডের তোলা ২০২৪ সালের ছবিতে সেই স্থানে এখন প্রায় কোনো বরফ নেই।

আর্টিক অঞ্চল, যা কিনা উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত, সেখানে গত কয়েক দশকে উষ্ণতা বেড়েছে দ্রুত গতিতে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখানকার তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে।

কোনো কোনো হিসাব অনুযায়ী, এই বৃদ্ধির হার চারগুণ পর্যন্ত হতে পারে। এর ফলে সমুদ্রের বরফ দ্রুত গলতে শুরু করেছে।

এই বরফ গলতে শুরু করার কারণে একদিকে যেমন সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, তেমনই সমুদ্রস্রোতের স্বাভাবিক গতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জুলিওন স্ট্রোভ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “আর্টিক সাগরে আগের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বরফ কমে গেছে।

জলবায়ু মডেল ও গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এখানে বরফ-মুক্ত গ্রীষ্মকাল দেখা যেতে পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, এমনটা ঘটলে পরিবেশের মারাত্মক পরিবর্তন ঘটবে, যা গত ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছরেও দেখা যায়নি। এর ফলস্বরূপ গ্রিনল্যান্ডসহ অন্যান্য অঞ্চলের বরফও গলতে শুরু করবে, যা এখানকার জনজীবনকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলবে।

আর্টিকের এই পরিবর্তন শুধু ওই অঞ্চলের জন্য নয়, বরং এর প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো নিচু এলাকাগুলোর জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এতে বাস্তুহারা হবে বহু মানুষ, কমবে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

ফটোগ্রাফার ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসলান্ড তার তোলা ছবিগুলো প্রকাশের পর অনেক সমালোচনার শিকার হয়েছেন। অনেকে তার ছবিগুলোকে ‘ফটোশপ’ করা বলেও মন্তব্য করেছেন।

অ্যাসলান্ড বলেন, “আমি অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি, মানুষ এখনো তাদের চোখের সামনে দেখা সত্যিটা বিশ্বাস করতে চায় না।

ছবিগুলো হাজারো শব্দের চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে হয়তো আগামী ১০ বছরের মধ্যে এখানকার অনেক কিছুই হারিয়ে যাবে।”

আর্টিকের এই সংকট থেকে বাঁচতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানো, দূষণ রোধ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।

একইসঙ্গে, বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরও বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *