শীতল গন্তব্যেও তাপপ্রবাহ! ভয়ঙ্কর বিপদ?

আর্কটিক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ: বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা আগে হয়তো মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। উত্তর মেরু অঞ্চলের দেশগুলোতেও এখন গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহের ঘটনা বাড়ছে, যা সেখানকার জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এই পরিবর্তনের কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, যার ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে এবং মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলছে।

সাধারণত, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের শীতল আবহাওয়ার জন্য পরিচিত। পর্যটকদের কাছেও এই স্থানগুলো গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে ভ্রমণের আদর্শ জায়গা ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সম্প্রতি, এই অঞ্চলগুলোতে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।

গবেষণা বলছে, গত কয়েক বছরে আর্কটিক অঞ্চলের দেশগুলোতে তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনল্যান্ডে টানা ২২ দিন ধরে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

সেখানকার আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, গত বছর ছিল গত দুই সহস্রাব্দের মধ্যে উষ্ণতম বছর, আর এবার তারা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে।

এই তাপপ্রবাহের কারণে সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। গরমের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া, অতিরিক্ত গরমের কারণে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের উপরেও খারাপ প্রভাব পড়ছে। সেখানকার আদিবাসী ‘সামী’ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, যারা মূলত তুষার হরিণ পালন করেন, তাদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

তুষার হরিণেরা গরমের কারণে স্বাভাবিক চারণভূমি ছেড়ে লোকালয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

আর্কটিক অঞ্চলের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে এবং গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার মতো জনবহুল শহরগুলোতে গরমের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

একইসাথে, বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করা যায়।

আর্কটিক অঞ্চলের তাপপ্রবাহের ঘটনা প্রমাণ করে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা পৃথিবীর কোনো একটি অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

তাই, এই সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সকল দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রাখা যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *