আতঙ্কের পূর্বাভাস! আর্কটিকে দ্রুত পরিবর্তন, উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা

আর্টিক অঞ্চলের উদ্ভিদ গবেষণা: জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল স্থানগুলোর একটি, উত্তর মেরু। এখানকার বাস্তুতন্ত্রে দ্রুত পরিবর্তন আসছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি “আর্লি ওয়ার্নিং সাইন” হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এক নতুন গবেষণায় দেখেছেন, আর্কটিকে গাছপালা যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। এর প্রভাব শুধু মেরু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে।

এই গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ বছর ধরে কানাডার সুমেরু অঞ্চল থেকে আলাস্কা ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ৪৫টি স্থানে ২,০০০ এর বেশি উদ্ভিদের সম্প্রদায়ের ওপর নজর রাখেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, তাপমাত্রা এবং ঋতু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভিদের মধ্যে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অঞ্চলে গুল্ম এবং ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যেখানে ফুল গাছের সংখ্যা কমছে। এর কারণ হলো, লম্বা গুল্মগুলো সূর্যের আলো আটকে দেওয়ায় ফুল গাছগুলো প্রয়োজনীয় আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, উষ্ণ অঞ্চলে উদ্ভিদের বিভিন্নতা বেশি। তবে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে, আবার কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে “টিম শ্রাব”-এর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সেখানকার তুন্দ্রা অঞ্চলে উইলোর মতো গুল্ম দ্রুত বাড়ছে। এই গুল্মগুলো অন্যান্য উদ্ভিদের থেকে বেশি শক্তিশালী, যা তাদের জায়গা করে নিতে সাহায্য করছে। এর ফলে, শ্যাওলা এবং লাইকেনের মতো উদ্ভিদ, যা সাধারণত ধীরে ধীরে জন্মায়, তারা বিলুপ্ত হচ্ছে।

এই পরিবর্তনগুলো আর্কটিক অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের এই পরিবর্তন সেখানকার কারিবু হরিণের মতো প্রাণীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে। কারণ, কারিবু সাধারণত শ্যাওলা জাতীয় খাবার পছন্দ করে, যা গুল্মের আধিক্যের কারণে কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক গ্রেগ হেনরি, যিনি এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহের কাজে সাহায্য করেছেন, বলেছেন, বিজ্ঞানীরা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে হাজার হাজার ঘণ্টা ধরে কাজ করেছেন। তাঁদের চরম আবহাওয়া, পোকামাকড় এবং মেরু ভালুকের মতো প্রাণীর সঙ্গেও মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে, শ্যাওলা এবং লাইকেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

গবেষকরা মনে করেন, আর্কটিকে যে পরিবর্তনগুলো দেখা যাচ্ছে, তা একটি বৃহত্তর সমস্যার পূর্বাভাস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে এবং সেগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে চান, কারণ এটি “কখন ঘটবে” সেই প্রশ্নের চেয়ে “কখন ঘটবে না” সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *