আর্জেন্টিনার সেনেটে মাইলির প্রার্থীতা বাতিল! তোলপাড়!

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জাভিয়ের মেইলেইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সিনেটে তার মনোনীত দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সিনেটে অনুষ্ঠিত ভোটে প্রেসিডেন্ট মেইলেইয়ের প্রস্তাবিত দুই বিচারপতি প্রার্থী—আরিয়েল লিহো এবং ম্যানুয়েল গার্সিয়া-মানসিয়াকে প্রত্যাখান করা হয়। এর ফলে আর্জেন্টিনার সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে মেইলেইয়ের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট মেইলেই গত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ডিক্রির মাধ্যমে এই দুই বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকার কারণে সংবিধানের একটি ধারা অনুযায়ী তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন।

তবে বিরোধী দলসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, কংগ্রেসের অবকাশকালীন সময়ে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের সীমিত।

সিনেটর আনাবেল ফার্নান্দেজ সাগাস্তি বিষয়টিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “সরকার আইনসভা এবং বিচার বিভাগের ওপর একটি গুরুতর আঘাত এনেছে। আমরা এখানে একটি প্রাতিষ্ঠানিক আগ্রাসন দেখছি।”

আদালতে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ছিল গুরুতর অভিযোগ। বিচারক আরিয়েল লিহোর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, বিচার বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির মামলা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এমনকি বিরোধী দলের অনেক সদস্যও তার নিয়োগের বিরোধিতা করেন। এছাড়া, গার্সিয়া-মানসিয়া সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে বামপন্থী পেরোনিজ বিরোধী দলের সমালোচনার শিকার হন।

বৃহস্পতিবারের ভোটাভুটিতে লিহোর মনোনয়ন ৪৩ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়, যেখানে তার পক্ষে ভোট পড়েছিল মাত্র ২৭টি। অন্যদিকে গার্সিয়া-মানসিয়াকে ৫১ ভোটের বিপক্ষে মাত্র ২১ ভোট পাওয়া যায়।

ভোটের ফল প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট মেইলেই সিনেটের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বিচারকদের শূন্যপদ রেখে সিনেট আসলে বিচার বিভাগের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।” মেইলেই তার প্রতিক্রিয়ায় আরও জানান, তিনি সংবিধান ও জনগণের রায়কে সম্মান জানিয়ে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করবেন।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আমেরিকার উপ-পরিচালক জুয়ান প্যাপিয়ার এই ঘটনাকে আর্জেন্টিনার গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “আজ আর্জেন্টিনার সিনেট গণতন্ত্রে ফেরার পর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মেইলেই আর্জেন্টিনার গণতান্ত্রিক কাঠামোর মৌলিক নীতিগুলো দুর্বল করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন।”

আর্জেন্টিনার এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *