আর্জেন্টিনার একটি সংরক্ষিত অঞ্চলে পেঙ্গুইন পাখির আবাস ধ্বংসের ঘটনায় জড়িত এক খামারিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনার জেরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খবরটি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।
পান্তা টম্বো নামক একটি সংরক্ষিত এলাকায় প্রায় এক লক্ষ আশি হাজার জোড়া ম্যাজেলানিক পেঙ্গুইন পাখির বাস। প্রতি বছর শীতের শেষে এখানে তারা মিলিত হয় এবং তাদের ছানারা জন্ম নেয়।
২০২১ সালের নভেম্বরে, স্থানীয় খামারি রিকার্ডো লা রেজিনা নামের এক ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি ব্যাকহো দিয়ে পাখির বাসাগুলোর ওপর বুলডোজার চালান। এতে প্রায় ১৭৫টি পাখির বাসা ধ্বংস হয়ে যায় এবং একশটির বেশি পেঙ্গুইন মারা যায়।
এই ঘটনার পর পরিবেশবিদ এবং প্রাণী বিজ্ঞানীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেন। এরপর তারা প্রমাণসহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করেন।
আর্জেন্টিনার আইনে বন্যপ্রাণী বিষয়ক অপরাধ সাধারণত তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু গণমাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপক প্রচারের ফলে জনমত তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে এই মামলার শুনানি হয়।
আদালতে খামারি লা রেজিনাকে পরিবেশের ক্ষতিসাধন, প্রাণী নির্যাতনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত তাকে তিন বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেয়।
অর্থাৎ, তিনি সম্ভবত এখনই কারাবন্দী হবেন না, তবে শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে জেলে যেতে হতে পারে। এছাড়াও, তার উপর জরিমানা এবং জমির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাকে পেঙ্গুইন ও তাদের বাসার কাছ থেকে গবাদি পশু সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
আদালতের এই রায়কে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর ফলস্বরূপ, আর্জেন্টিনার সরকার পান্তা টম্বোর চারপাশের সংরক্ষিত এলাকাকে প্রায় আটগুণ বৃদ্ধি করেছে।
এছাড়া, সরকার পেঙ্গুইন এবং অন্যান্য বিপন্ন সামুদ্রিক পাখি, উদ্ভিদ ও সমুদ্র সিংহ সহ উপকূলের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি নতুন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে চাইছে। পরিবেশ বিষয়ক অপরাধকে জাতীয় দণ্ডবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্জেন্টিনার এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষ করে, সমুদ্র যেখানে পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রার প্রধান স্থান, সেই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি।
কারণ, আর্জেন্টিনার উপকূল জুড়ে তেলের উৎপাদন বাড়ছে, যা পেঙ্গুইনদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
বর্তমানে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পেঙ্গুইনরা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। নতুন ছানারাও জন্ম নিচ্ছে। তারা তাদের বেড়ে ওঠার পর উত্তরের উষ্ণ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই। এটি শুধু আর্জেন্টিনার ঘটনা নয়, বরং সারা বিশ্বের পরিবেশ প্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক