অ্যারিজোনায় বিশেষ নির্বাচনে নেতৃত্বের লড়াই: তরুণ প্রজন্মের উত্থান?

আরিজোনা রাজ্যে আসন্ন বিশেষ নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের মধ্যে বিভেদ: পুরনো বনাম নতুনের লড়াই।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে একটি বিশেষ নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন প্রবীণ রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য, তেমনই অন্যদিকে উঠে আসছে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি।

আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের একটি শূন্য আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য এই লড়াই। সম্প্রতি প্রয়াত কংগ্রেসম্যান রাউল গ্রিজালভার মেয়ে অ্যাডেলিতা গ্রিজালভার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেজা ফক্স নামের এক তরুণ সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট।

৫‌৪ বছর বয়সী অ্যাডেলিতা গ্রিজালভা, যিনি এর আগে পিমা কাউন্টি সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, নিজেকে তার বাবার প্রগতিশীল আদর্শের ধারক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। একইসঙ্গে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থন ও নেতাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে, ২৫ বছর বয়সী ডেজা ফক্স এবং ৩৫ বছর বয়সী ড্যানিয়েল হার্নান্দেজ, যারা অতীতে স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন, তারা গ্রিজালভার রাজনৈতিক পরিবারের পরিচিতি ও সমর্থনকে দুর্বল করতে চাইছেন। ফক্স মনে করেন, “মানুষ পরিবর্তনের প্রার্থী চায়, তারা পুরনো রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বাইরে নতুন মুখ দেখতে আগ্রহী।”

এই নির্বাচন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এনেছে। আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সকল ডেমোক্রেট প্রার্থীই ট্রাম্পের নীতিমালার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে, অ্যারিজোনার এই নির্বাচনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে জয়ী হওয়ার জন্য ডেমোক্রেটদের মধ্যে মূল লড়াই হবে গ্রিজালভা ও ফক্সের মধ্যে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিজালভার পারিবারিক পরিচিতি এবং অতীতের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাকে এগিয়ে রাখলেও, ফক্সের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি এবং পরিবর্তনের অঙ্গীকার ভোটারদের মধ্যে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

নির্বাচনে প্রচারণার খরচও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গ্রিজালভা তার প্রচারের জন্য প্রায় ৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ডলার খরচ করেছেন, যেখানে ফক্সের প্রচারের খরচ ৬ লক্ষ ১৪ হাজার ডলার।

অন্যদিকে, ড্যানিয়েল হার্নান্দেজ প্রায় ৫ লক্ষ ৯ হাজার ডলার খরচ করেছেন। (ডলারের বর্তমান বাজারমূল্য ধরে এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে বেশ বড় একটি অঙ্ক দাঁড়ায়।)

হার্নান্দেজ স্বাস্থ্যখাত এবং খনিজ সম্পদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। তবে, তিনি নিজেকে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত করতে রাজি নন।

তিনি মনে করেন, যারা সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও আইন প্রণয়নে ব্যর্থ হন, তারা আসলে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকেন।

অন্যদিকে, গ্রিজালভা তার প্রচারণায় প্রগতিশীল নীতি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমর্থন এবং তার পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি তার বাবার সঙ্গে কাটানো সময়ের ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

ফক্স তার প্রচারণায় দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার মানুষের প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন। তিনি একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন। ফক্স প্রায়ই গ্রিজালভার বিরুদ্ধে তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতি সমর্থন এই নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা এখনো বলা কঠিন।

তবে, এই নির্বাচন অ্যারিজোনার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে, যা আগামী দিনে দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: (ইউ এস মিডিয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *