এক বছরেই দুইবার: ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত, দিশেহারা পরিবার!

আর্কানসাসের (Arkansas) একটি পরিবার, যাদের বাড়িটি এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো টর্নেডোর আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা সেখানকার বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের প্যারাগোল্ড (Paragould) শহরে বসবাসকারী একটি পরিবার, যাদের নাম ড্রোপ (Drope)। তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। গত বছর, ২০২৩ সালের মে মাসে একটি টর্নেডোর আঘাতে তাদের বাড়ির ক্ষতি হয়।

এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে, আবারও আঘাত হানে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এতে তাদের বসতবাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

মিস্ট ড্রোপ নামের ওই পরিবারের এক নারী জানান, ঘটনার দিন তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে খারাপ আবহাওয়ার কথা শুনে তিনি শংকিত ছিলেন।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও টর্নেডোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করছিল।

যখন তিনি তার স্বামী ব্রুস (Bruce) এবং ১৯ বছর বয়সী মেয়ে কেলির (Keely) সঙ্গে বাড়িতে ফিরে আসেন, তখন তারা সেখানকার আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হন। কারণ, এর আগেও তারা এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

তারা দ্রুত শুকনো কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন – ঔষধপত্র, মোবাইল চার্জার এবং জরুরি কিছু জিনিসপত্র সংগ্রহ করেন।

খবর অনুযায়ী, টর্নেডো আসার আগে সেখানকার আবহাওয়া আরও খারাপ হতে শুরু করে। বাড়ির কাছাকাছি একটি ওয়ালমার্ট (Walmart) -এর উপর দিয়ে একটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তারা দ্রুত আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তাদের বাড়িতে কোনো বেসমেন্ট (basement) ছিল না। তাই তারা একটি বাথরুমের ভেতরে আশ্রয় নেন। তারা তাদের পোষা কুকুর দুটিকে সাথে নিয়ে আসন্ন দুর্যোগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ফোনে টর্নেডোর সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে। বাইরে সাইরেন বাজছিল। ড্রোপ পরিবারটির জন্য এটি ছিল খুবই পরিচিত একটি শব্দ।

ড্রোপ বলেন, “আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, এমনটা আবার কেন হলো?” কারণ, গত বছর টর্নেডোর আঘাতে তাদের বাড়ির সংস্কার করতে প্রায় ছয় মাস লেগেছিল।

এর কিছুক্ষণ পরেই, এক ভয়ংকর নীরবতা নেমে আসে। এরপরই শুরু হয় সেই বিভীষিকা। তীব্র বাতাস বইতে শুরু করে, চারপাশে ধ্বংসাবশেষ উড়তে থাকে, পাইপ ফেটে যায় এবং টর্নেডো তাদের বাড়িটিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

ড্রোপের ভাষ্যমতে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড ধরে মনে হচ্ছিল যেন টর্নেডো তাদের চারপাশের সবকিছু গ্রাস করছে। তিনি বলেন, “যেন ঝড় এসে আপনার বাড়িটিকে খেয়ে ফেলছে। এই দৃশ্য কখনো ভোলা যায় না।

তিনি আরও বলেন, “আমি আমার মেয়েকে ধরে রেখেছিলাম, আর আমরা আমাদের কুকুরগুলোর উপর শুয়ে ছিলাম। ব্রুস দরজার সাথে পা আটকে ধরেছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, আগের বারের চেয়ে এটি আরও ভয়ংকর।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর জানায়, ১৫ই মার্চ তারিখে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ‘ইএফ-২’ (EF2) ক্যাটাগরির, যার বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১২৫ মাইল। এর আগে, ২০২৩ সালের মে মাসে আঘাত হানা টর্নেডোর বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ মাইল।

ড্রোপ পরিবারের জন্য এই ঘটনা ছিল খুবই কষ্টের। কারণ, তাদের বাড়িটি ছিল তাদের ভালোবাসার আশ্রয়স্থল।

ড্রোপ জানান, টর্নেডো চলে যাওয়ার পর তারা যখন বাথরুম থেকে বের হন, তখন তারা দেখতে পান তাদের বাড়ির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বৃষ্টির পানিতে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। চারপাশে ভাঙা কাঁচ, কাঠের টুকরা এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

তবে তাদের এই কষ্টের দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রতিবেশীরা। ড্রোপ বলেন, “আমি যখন আমার প্রতিবেশীদের বাড়িগুলোও ধ্বংস হতে দেখি, তখন কান্না ধরে রাখতে পারিনি।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুধু ড্রোপ পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই ঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কারণে সৃষ্ট টর্নেডো, দাবানল এবং ধূলিঝড়ে অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, গাছপালা উপড়ে গেছে এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে।

এতে অন্তত ৪২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ড্রোপ পরিবার তাদের এলাকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা জানে, জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। টর্নেডোর আঘাত তাদের জন্য কষ্টের হলেও, তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো আছেন।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *