নিজের উন্নতির নেশা: অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের ফাঁদে পড়ার বিপদ
আজকাল, মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং মানসিক শান্তির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে। শরীরচর্চা থেকে শুরু করে মনের শান্তির জন্য ধ্যান, বই পড়া অথবা কাউন্সেলিং – এমন নানা কিছুই এখন বেশ পরিচিত।
তবে অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের চেষ্টা কি কখনো হিতে বিপরীত হতে পারে? সম্প্রতি, এক লেখায় আত্ম-উন্নয়নের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগের কুফল তুলে ধরেছেন হানা ইওেন্স।
হানা ইওেন্সের অভিজ্ঞতা হলো, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আত্ম-উন্নয়নের বিভিন্ন উপায় চেষ্টা করেছেন। কাউন্সেলিং থেকে শুরু করে বিশেষ ধরনের ব্যায়াম, এমনকি শব্দ এবং আলোর মাধ্যমে হওয়া থেরাপিও তিনি নিয়েছেন।
শুরুতে, তিনি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, তিনি বুঝতে পারেন যে অতিরিক্ত চেষ্টা তাকে আরও বেশি হতাশ করে তুলছে। সব সময় নিজেকে ‘ঠিক’ করার এই অবিরাম চেষ্টা যেন তার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
ইওেন্সের মতে, আত্ম-উন্নয়নের ধারণাটা সম্ভবত আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। আমরা সবসময় নিজেদের ভালো করতে চাই। ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে চাই, আরও সুখী হতে চাই।
কিন্তু সমস্যা হলো, এই ভালো হওয়ার সংজ্ঞাটা সবার জন্য এক নয়। এই বিষয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে, আমরা নিজেদের দুর্বলতাগুলো আরও বেশি করে অনুভব করতে শুরু করি।
তিনি খেয়াল করেছেন, এই ধরনের মানসিকতা আমাদের সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের মধ্যে কিছু একটা ‘ভুল’ আছে, এবং সেই ‘ভুল’টাকে সারানোর প্রয়োজন।
ইওেন্স আরও উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমান বিশ্বে আত্ম-উন্নয়নের নামে বিশাল ব্যবসা চলছে। বিভিন্ন ধরনের ‘ওয়েলনেস’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জিত হচ্ছে, যেখানে মানুষকে সবসময় ‘নিজেদের ভালো করার’ কথা বলা হয়।
কিন্তু এই অবিরাম চেষ্টা কি আদৌ ফলপ্রসূ? নাকি, এটি আমাদের আরও বেশি হতাশ করে তোলে?
হানা ইওেন্সের মতে, আত্ম-উন্নয়নের পথে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। সবকিছুর একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে।
মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ুং-এর তত্ত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করার প্রক্রিয়াটি একটি “সর্পিল” পথের মতো। অর্থাৎ, সমস্যাগুলো বারবার ফিরে আসে, তবে প্রত্যেকবার আমরা সেগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন কিছু শিখি।
এই লেখায়, হানা ইওেন্স অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের ধারণা থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এখন বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটানো, পছন্দের কাজ করা এবং শরীর ও মনের কথা শোনার উপর বেশি জোর দেন।
অতিরিক্ত বই পড়া বা সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর না করে, জীবনের সাধারণ বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ইওেন্সের এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। জীবনের উন্নতির জন্য চেষ্টা অবশ্যই জরুরি, তবে এর নামে অতিরিক্ত কিছু করতে গিয়ে যেন আমরা আসল সুখ থেকে দূরে চলে না যাই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান