আর্থার অ্যাশের উইম্বলডন জয়: ৫০ বছর পরেও ক্রীড়াঙ্গনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৫ সাল।
ঘড়ির কাঁটা তখন জানান দিচ্ছিলো এক নতুন ইতিহাসের। ঘাসের কোর্টে তখন বিশ্ব টেনিস এর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, জিমি কনার্সকে হারিয়ে উইম্বলডন জয় করেন আর্থার অ্যাশ।
শুধু খেতাব জয় নয়, এই জয় ছিল এক বর্ণাঢ্য ইতিহাসের সূচনা। কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে প্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে উইম্বলডনের মত ঐতিহ্যপূর্ণ টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার কৃতিত্ব আজও তাকে অমর করে রেখেছে।
আর্থার অ্যাশের জন্ম ১৯৪৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিচমন্ড শহরে। টেনিসের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় বাবার হাত ধরে।
বাবার কর্মস্থল ছিল একটি পার্ক, যেখানে টেনিস কোর্টও ছিল। সেই কোর্টে খেলার সুযোগ হয় অ্যাশের। ধীরে ধীরে খেলাটির প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। তবে, সেসময় বর্ণবাদের কারণে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে।
শ্বেতাঙ্গ প্রধান সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি খেলা চালিয়ে যান।
১৯৬৩ সালে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিস কাপ দলে খেলার সুযোগ পান। এরপর ১৯৬৮ সালে ইউএস ওপেন জয় করেন।
এরপর ১৯৭০ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং অবশেষে ১৯৭৫ সালে আসে সেই ঐতিহাসিক উইম্বলডন জয়।
টেনিস কোর্টে অ্যাশের শান্ত ও দৃঢ়চেতা মনোভাব ছিল প্রশংসনীয়। খেলার সময় তার ঠাণ্ডা মেজাজ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
খেলোয়াড় জীবনে যেমন তিনি ছিলেন অবিচল, তেমনি মাঠের বাইরেও সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন তিনি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া থেকে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সবসময় মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি।
খেলা ছাড়ার পরও তিনি সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জানতে পারেন যে তিনি এইচআইভি পজিটিভ। এরপর ১৯৯২ সালে বিশ্ব এইডস দিবসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি এই বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
খেলা জীবনের বাইরেও সমাজের প্রতি তার অবদান ছিল অনেক। তিনি সবসময় চেয়েছেন, মানুষ তাকে একজন ভালো খেলোয়াড় হিসেবে নয়, বরং একজন ভালো মানুষ হিসেবে মনে রাখুক।
আর্থার অ্যাশের এই জয় শুধু একটি খেতাব জয় ছিল না, বরং এটি ছিল একটি অনুপ্রেরণা। তার এই জয় নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের সাহস জুগিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম হলেন ফ্রান্সিস টিয়াফো। তিনি আর্থার অ্যাশের মানবিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “আর্থার অ্যাশ শুধু একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদর্শ”।
আর্থার অ্যাশের উইম্বলডন জয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ অ্যাশের পরিবারকে বিশেষ সম্মান জানাচ্ছে।
এছাড়াও, “উইম্বলডন কুই”-তে স্থাপন করা হয়েছে একটি লাল টেলিফোন বক্স। যেখানে অ্যাশের জয়ের মুহূর্তগুলো শোনা যাচ্ছে।
এই আয়োজনের মাধ্যমে অ্যাশের অবদানকে স্মরণ করা হচ্ছে। আর্থার অ্যাশের জীবন ও কর্ম আজও ক্রীড়াঙ্গনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তার লড়াই, সাহস এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: CNN