কৌতূহল উদ্দীপক: ১৫০০০ ডলারের তলোয়ার তৈরির কারিগরদের অজানা গল্প!

জাপানে এখনো টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প: ১৫,০০০ ডলারের তলোয়ার তৈরির কারিগর।

জাপানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তলোয়ার তৈরি। সুদীর্ঘকাল ধরে, এই শিল্পের কারিগররা তাদের দক্ষতা আর নিপুণতা দিয়ে তৈরি করেছেন অসাধারণ সব তলোয়ার, যা শুধু অস্ত্র হিসেবেই নয়, শিল্পকর্ম হিসেবেও জগৎজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।

আধুনিক যুগে এই শিল্পের চাহিদা কিছুটা কমলেও, এখনো কিছু কারিগর তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। তাদেরই একজন হলেন কোসুক ইয়ামাজোয়ে, তোমোকি কুওমोटो এবং তোমিয়ুকি মিয়াগি।

এই তিন তরুণের দল মিলে তৈরি করেছেন “নিপ্পন গেনশশা” নামের একটি কর্মশালা, যেখানে তারা তৈরি করেন অত্যাধুনিক “কাতানা” (ঐতিহ্যবাহী জাপানি তলোয়ার)। প্রতিটি তলোয়ারের দাম প্রায় ১৫,০০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার সমান (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, পরিবর্তনশীল)।

এই শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরোনো। একসময় জাপানের যোদ্ধা শ্রেণী, অর্থাৎ “সামুরাই”-দের জন্য এই তলোয়ার তৈরি করা হতো। সময়ের সাথে সাথে এর কদর কমে গেলেও, ঐতিহ্য হিসেবে আজও এটি টিকে আছে।

ইয়ামাজোয়ে, কুওমoto এবং মিয়াগি- এই তিন বন্ধু মিলে টোকিওতে ইয়োশিকাযু ইয়োশিহারার অধীনে ১০ বছর ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ইয়োশিকাযুর বাবা ইয়োশিনদো ইয়োশিহারাও ছিলেন খ্যাতিমান একজন তলোয়ার শিল্পী।

প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৯ সালে তারা তাদের নিজস্ব কর্মশালা “নিপ্পন গেনশশা” শুরু করেন।

তাদের তলোয়ার তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তলোয়ার তৈরি হয় “তামাহাগানে” নামক বিশেষ এক ধরনের ইস্পাত থেকে, যা হিরোশিমার উত্তরে অবস্থিত শিমানে প্রদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

প্রথমে, এই ইস্পাতকে একটি বিশেষ চুল্লিতে প্রায় তিন দিন ধরে গলানো হয়। এরপর, গলিত ইস্পাতকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, ভাঁজ করে এবং আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করা হয়।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইস্পাতের ভেতরের দূষিত উপাদান বের করে আনা হয় এবং এটিকে আরও শক্তিশালী করা হয়। এরপর, তলোয়ারের ধারালো প্রান্ত তৈরি করা হয় এবং এর পৃষ্ঠে নান্দনিক ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়।

এই তলোয়ারগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সৌন্দর্য। আলোর প্রতিফলন এবং তলোয়ারের কারুকার্য দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। বর্তমানে, তারা তাদের শিল্পের প্রসারের জন্য কিছু নতুনত্ব যোগ করেছেন।

তারা তলোয়ারের “হামোন” (তলোয়ারের ধারালো অংশে খোদাই করা নকশা) -এ পরিবর্তন এনেছেন, যা গ্রাহকদের নিজস্ব রুচি অনুযায়ী ডিজাইন করার সুযোগ করে দেয়। এছাড়াও, তারা তলোয়ারের ঐতিহ্যবাহী কাঠের খাপের পরিবর্তে স্বচ্ছ রেজিন ব্লকের ব্যবহার শুরু করেছেন, যা দর্শকদের তলোয়ারের সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করে।

ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এই মিশ্রণ তাদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। তবে, তারা এটাও জানেন যে, এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নতুন প্রজন্মের সংগ্রাহক তৈরি করার উপর।

ঐতিহ্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি, তারা আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছেন, যা তাদের শিল্পকে আরও দীর্ঘকাল বাঁচিয়ে রাখবে। জাপানের এই প্রাচীন শিল্পকর্ম আজও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত, এবং এই কারিগররা তাদের দক্ষতা ও নিষ্ঠা দিয়ে সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *