শিল্পীর তুলিতে প্রিয়জনের স্মৃতি: ছাই থেকে আঁকা ছবি। জীবনে শোক আর হারানোর বেদনা মানুষকে অনেক কিছুই শেখায়।
প্রিয়জনদের স্মৃতি সবসময় হৃদয়ে গেঁথে থাকে, আর সেই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষ কত কিছুই না করে। কেউ ছবি আঁকেন, কেউ কবিতা লেখেন, আবার কেউ ভালোবাসার মানুষটির নামে কিছু তৈরি করেন।
সম্প্রতি এমনই এক শিল্পীর কথা জানা গেছে যিনি প্রিয়জনের স্মৃতিকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন, তবে তাঁর কাজটি অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। তিনি মানুষের মৃত্যুর পর তাঁদের ছাই ব্যবহার করে ছবি আঁকেন।
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আকর্ষণ ছিল এই শিল্পীর। পেশাগত জীবনে প্রথমে তিনি শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন, কিন্তু শিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সবসময় ছিল।
অবসর সময়ে তিনি ছবি আঁকা চালিয়ে যেতেন। একসময় হাওয়াই দ্বীপে কয়েক বছর কাটানোর পর তাঁর শিল্পীসত্তা যেন নতুন করে জেগে ওঠে। সেখানে তিনি বিভিন্ন আর্ট কোর্সে অংশ নিতেন, যা তাঁর ভেতরের শিল্পীকে আরও উৎসাহিত করে।
২০১৯ ও ২০২১ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়। এই শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য তিনি পুরোদমে ছবি আঁকা শুরু করেন। অ্যাক্রিলিক রং ব্যবহার করে ক্যানভাসে বিমূর্ত ছবি আঁকতে শুরু করেন তিনি।
ছবিগুলো তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতেন। এরপরই আসে সেই অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব। তাঁর এক অনুরাগী তাঁর কাজ খুব পছন্দ করতেন এবং নিজের মায়ের ছাই দিয়ে একটি ছবি আঁকার অনুরোধ করেন।
এই প্রস্তাব পাওয়ার পর শিল্পী নিজের মা ক্যারলের কথা ভাবলেন। মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর ছাই একটি কলসে রাখা ছিল। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও পরে তিনি রাজি হন।
মায়ের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় তিনি এই কাজটি করতে মনস্থির করেন। তিনি অনুভব করেন, মা-ও হয়তো চাইতেন তাঁর স্মৃতি একটি সুন্দর ছবিতে অমর হয়ে থাকুক, যা মানুষ প্রতিদিন দেখবে এবং ভালোবাসবে।
তবে কাজটি সহজ ছিল না। ছাইয়ের রাসায়নিক উপাদান এবং রংয়ের ওপর এর প্রভাব নিয়ে তিনি সন্দিহান ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি একজন ফরেনসিক পরীক্ষাগারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের সহায়তায় ছাই ব্যবহারের উপযুক্ত কৌশল তৈরি করেন।
প্রথমে নিজের মায়ের ছাই ব্যবহার করে একটি সমুদ্রের ছবি আঁকেন, যা তাঁর রান্নাঘরে স্থান পায়। ছবিটি দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্লায়েন্টের কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর তিনি ক্লায়েন্টের মায়ের ছাই দিয়ে একটি সমুদ্রের ছবি আঁকেন। কাজটি ছিল খুবই সংবেদনশীল এবং আবেগময়। কাজটি শেষ হওয়ার পর যখন তিনি ছবিটি ক্লায়েন্টের হাতে তুলে দেন, তখন এক হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত তৈরি হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
ক্লায়েন্ট ছবিটি দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন, তবে সে কান্না ছিল আনন্দের।
বর্তমানে, তিনি প্রায় ২০টির বেশি স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ছবি এঁকেছেন। তাঁর একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে – ash2art.com। যেখানে তাঁর এই বিশেষ ধরনের শিল্পকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
তিনি জানান, ছবি আঁকার জন্য ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে তাঁদের প্রিয়জনের ছাই সংগ্রহ করেন, যা বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তাঁর কাজে ব্যবহার করা হয়।
শুধু মানুষ নয়, পোষ্যদের স্মৃতিকেও তিনি ছবিতে ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি, একটি বিড়ালের ছবি আঁকার অনুরোধ এসেছিল, যা তাঁর জন্য কিছুটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা ছিল। পোষ্যদের ছাই দিয়ে ছবি আঁকার চল বাড়ছে, তাই ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজের আরও সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এই শিল্পী তাঁর কাজের মাধ্যমে শোককে জয় করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই প্রয়াস অনেকের কাছেই প্রিয়জনদের স্মৃতিকে ধরে রাখার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian