শিল্পী ও তাদের সম্পর্ক: এক অভিনব চিত্র প্রদর্শনী!

শিরোনাম: শিল্পীর চোখে শিল্পী: প্রতিকৃতির মাধ্যমে সম্পর্কের উদযাপন

যুক্তরাজ্যের একটি স্বনামধন্য গ্যালারি, পালাট হাউস গ্যালারিতে সম্প্রতি ‘সীয়িং ইচ আদার: পোট্রেট অফ আর্টিস্টস’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে শিল্পীদের আঁকা অন্যান্য শিল্পীদের প্রতিকৃতিগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা শিল্পকলার জগতে শিল্পী এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের এক গভীর চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

প্রতিকৃতি (portrait) গুলো ভালোবাসার সম্পর্ক, বন্ধুত্ব এবং এমনকি শিল্পী-শিল্পীর মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেও যেন এক নতুন দৃষ্টিতে উপস্থাপন করে।

প্রদর্শনীটি বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে ব্রিটিশ আধুনিক শিল্পের বিভিন্ন ধারার বিবর্তন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ফ্রাঙ্ক আউয়ারবাখের আঁকা লিওন কসফের প্রতিকৃতি এবং কসফের তুলিতে আঁকা আউয়ারবাখের প্রতিকৃতি পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে।

যা দর্শকদের শিল্পীদ্বয়ের পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের শিল্পকর্মের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেয়। ম্যাথিউ স্মিথ এবং ভেরা কানিংহামের শিল্পকর্মের দিকে তাকালে তাদের মধ্যেকার শৈল্পিক আদান-প্রদান এবং প্রভাব সহজেই বোঝা যায়।

আবার লুসিয়ান ফ্রয়েড ও সেলিয়া পলের মতো শিল্পীদের প্রতিকৃতিতে ভালোবাসার গভীরতাও যেন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রদর্শনীতে ওয়াল্টার সিকার্টের প্রতিকৃতিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার বন্ধু সিলভিয়া গোস, নিনা হ্যামনেট এবং স্ত্রী থেরেজ লেসোর তার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিকৃতি এঁকেছেন।

প্রতিটি চিত্রে সিকার্টের ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা ফুটে উঠেছে। গোস তাকে এক মধ্যবয়স্ক, সচ্ছল মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন, অন্যদিকে হ্যামনেটের ছবিতে তার মুখের দিকে সরাসরি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।

লেসোর এঁকেছেন তার পিছনের দিক, যেখানে তার মুখচ্ছবি প্রায় অস্পষ্ট। এই প্রতিকৃতিগুলো একটি মানুষের সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ধারণা দেয়।

প্রদর্শনীটি শুধু শিল্পী-শিল্পীর সম্পর্কই তুলে ধরে না, বরং ব্রিটিশ আধুনিক শিল্পের একটি সামাজিক ও সহযোগী চিত্রও উপস্থাপন করে। প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত প্রতিকৃতিগুলো বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময়ের শিল্প আন্দোলনের একটি প্রতিচ্ছবি।

এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর পারস্পরিক যোগাযোগের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা দর্শকদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়। জন ব্র্যাটবি ও জ্যাঁ কুকের প্রতিকৃতিগুলো যেন তাদের দাম্পত্য জীবনের তিক্ততা প্রকাশ করে।

আবার সেড্রিক মরিসের আঁকা বারবারা হেপওয়ার্থের প্রতিকৃতিতে শিল্পীর প্রতি তার অপছন্দ সুস্পষ্ট।

সমকালীন অংশে শিল্পী চান্টাল জোফ এবং ইশবেল মায়ারস্কফের নিজেদের আঁকা তিনটি প্রতিকৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা শিল্পী হিসেবে তাদের নিজেদের সম্পর্কের গভীরতা ফুটিয়ে তুলেছেন।

গিলিয়ান ওয়্যারিংয়ের জর্জিয়া ও’কিফের প্রতিকৃতি এবং ক্যারোলিন কুনের পলিন বোটির পুনর্নির্মিত চিত্রগুলো সময়ের ব্যবধান পেরিয়ে শিল্পীদের মধ্যেকার সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।

প্রদর্শনীটি লুবাইনা হামিদ-এর আঁকা কাঠের নারী শিল্পীদের প্রতিকৃতি দিয়ে শুরু এবং শেষ হয়। এদের মধ্যে এলিজাবেথ ভিজি-লে ব্রুন, ফ্রিদা কাহলো, ব্রিজেট রাইলি এবং হামিদের বন্ধু ক্লডেট জনসন অন্যতম।

এই প্রতিকৃতিগুলো প্রদর্শনীর মূল বার্তা বহন করে: শিল্পীরা একে অপরের প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখেন এবং শিল্পকর্ম তৈরি হয় পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রভাব থেকে।

‘সীয়িং ইচ আদার: পোট্রেট অফ আর্টিস্টস’ প্রদর্শনীটি শিল্পকলার জগতে শিল্পী ও তাদের সম্পর্কের একটি চমৎকার উদযাপন, যা দর্শকদের শিল্পকর্মের গভীরে প্রবেশ করতে এবং শিল্পীদের পারস্পরিক যোগাযোগের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *