চীনা বাজারের ‘প্রিয়’ খাবার: বাণিজ্য যুদ্ধের শিকার!

বাণিজ্য যুদ্ধের আঁচ: চীন-মার্কিন টানাপোড়েনে কোণঠাসা এশীয় মুদি দোকানগুলো

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ – চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধ এখন নতুন মোড় নিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের ওপর, বিশেষ করে তাদের মুদি দোকানগুলোতে।

আমদানি শুল্কের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, যা উদ্বেগে ফেলেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

নিউ ইয়র্কের কুইন্সের ফ্ল্যাশিং এলাকার একটি সুপারমার্কেট, ‘চ্যাং জিয়াং’। এখানে নানান ধরনের এশীয় খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। স্থানীয় এই দোকানগুলো মূলত তাদের সম্প্রদায়ের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে থাকে।

কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে তারাও এখন কঠিন পরিস্থিতির শিকার। দোকানের ম্যানেজার, যিনি শুধুমাত্র ‘উ’ নামেই পরিচিত, জানিয়েছেন, চীন থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যা তাদের ব্যবসার জন্য হুমকি স্বরূপ।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করায়, বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক খাবার, কফি, ফল, পনির, বাদাম এবং ক্যান্ডি বারসহ আরও অনেক খাদ্যদ্রব্য। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন কম আয়ের মানুষজন, কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ খাবারের পেছনে খরচ হয়।

ব্যবসার এই কঠিন পরিস্থিতিতে অনেক সরবরাহকারী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারো কারো মতে, নতুন করে আমদানি করা পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। অনেক সরবরাহকারী আবার শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।

ম্যানেজার ‘উ’ জানান, বর্তমানে তাদের কাছে থাকা পণ্যের দাম সেভাবে না বাড়লেও, চীন থেকে নতুন চালান আসলে দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন তারা। দুই মাসের মধ্যে যদি এই বাণিজ্য যুদ্ধের সমাধান না হয়, তাহলে দোকানের অনেক পণ্য হয়তো পাওয়া যাবে না।

এমন পরিস্থিতিতে তাইওয়ান বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানির কথা ভাবছেন তিনি।

ক্যালিফোর্নিয়ার আর্কাদিয়ায় অবস্থিত ‘উইং হপ ফুং’ নামের একটি পারিবারিক ব্যবসা, যারা চা, চীনা ভেষজ এবং অন্যান্য এশীয় পণ্য আমদানি করে, তারাও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা বলছেন, চীনের সঙ্গে তাদের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি।

শুল্ক বাড়ানো তাদের ব্যবসার জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক দশকে বিশেষ করে এশীয় খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এই বাজারের আকার ২০২৩ সালে ছিল ৮১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩২ সাল নাগাদ ১৫৩.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি এবং অনলাইনে সহজলভ্যতা।

তবে, বড় মুদি দোকানগুলো এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও, ছোট ও স্থানীয় দোকানগুলোর জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাওয়াইয়ের হনলুলুর চায়নাটাউনের ব্যবসায়ীরাও এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তাদের মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ তাদের পিছিয়ে দেবে।

ভোক্তাদের জন্য সতর্কবার্তা হলো, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আগেই তাদের পছন্দের পণ্য কিনে রাখা উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *