আতঙ্কে বিশ্ব! দ্রুত ছড়াচ্ছে এশীয় প্রতারণা, গোপন রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

শিরোনাম: এশীয় স্ক্যাম চক্রের বিস্তার: বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশিরা

সাম্প্রতিক এক জাতিসংঘের (UN) প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রগুলো তাদের প্রতারণামূলক কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে আরও বিস্তৃত করছে। মূলত কর্তৃপক্ষের ধরপাকড়ের কারণে তারা এখন নতুন নতুন অঞ্চলে তাদের জাল বিস্তার করছে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদেরও ঝুঁকির মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় (UNODC) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে বিশেষ করে কম্বোডিয়া, লাওস এবং মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে স্ক্যাম সেন্টারগুলো ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। এরপর, তারা পুলিশের নজর এড়াতে কৌশল পরিবর্তন করে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার মতো দূরবর্তী অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই চক্রগুলো মিথ্যা প্রেমের ফাঁদ, ভুয়া বিনিয়োগের প্রস্তাব এবং অবৈধ জুয়ার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশীয় অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং দুর্গম এলাকাগুলোতে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, শিল্প-মাপের স্ক্যাম সেন্টারগুলো প্রতি বছর প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকার সমান) মুনাফা তৈরি করে।

এই প্রবণতা বর্তমানে আরও বাড়ছে, কারণ বিভিন্ন দেশে এশীয়-নেতৃত্বাধীন স্ক্যাম সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ধরপাকড় চলছে। আফ্রিকা মহাদেশে নাইজেরিয়া বর্তমানে এই চক্রগুলোর প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নাগরিকও রয়েছেন। এছাড়াও, জাম্বিয়া এবং অ্যাঙ্গোলাতেও সাইবার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আটক করা হয়েছে।

ল্যাটিন আমেরিকায়, ব্রাজিল সাইবার-সংক্রান্ত প্রতারণা, অনলাইন জুয়া এবং অর্থ পাচারের মতো ঘটনার সঙ্গে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে, যার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপরাধী চক্রের যোগসূত্র রয়েছে। পেরুতে, তাইওয়ান-ভিত্তিক একটি চক্র, ‘রেড ড্রাগন সিন্ডিকেট’-এর দ্বারা পাচার হওয়া ৪০ জনের বেশি মালয়েশীয় নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রটি তাদের সাইবার প্রতারণা করতে বাধ্য করত।

প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্য এবং কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে এশীয়-নেতৃত্বাধীন স্ক্যাম সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এশীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের কার্যক্রমের ভৌগোলিক বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং একইসঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের অপরাধী চক্রগুলোও এতে জড়িত হচ্ছে।

নতুন অনলাইন মার্কেটপ্লেস, অর্থ পাচারের নেটওয়ার্ক, চুরি করা ডেটা পণ্য, ম্যালওয়্যার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এবং ডিপফেক প্রযুক্তির (deepfake technology) ব্যবহার অপরাধকে আরো সহজ করে তুলছে।

এই কার্যক্রমগুলোর বিস্তার এবং পেশাদারিত্ব একদিকে যেমন বাড়ছে, তেমনি তারা নতুন অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে। এর ফলে এই শিল্পে নতুন তীব্রতা সৃষ্টি হয়েছে, যার মোকাবিলায় সরকারগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান

অতএব, বাংলাদেশের নাগরিকদের অনলাইন প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *