**এশীয় শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রবণতা, বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা ও ওয়াল স্ট্রিটের পতন**
বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রীটে টানা ৯ দিনের উত্থানের পর পতন হওয়ায় এশিয়ান শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার দিনের শুরুতে বাজার ছিল মিশ্র প্রকৃতির।
একদিকে যেমন চীনের পরিষেবা খাতে মন্দা দেখা যাচ্ছে, তেমনই অপরিশোধিত তেলের দামে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে এর প্রভাব আরও বাড়ছে।
চীনের পরিষেবা খাতের কার্যকলাপের সূচক, যা সাধারণত ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক গতিবিধির ইঙ্গিত দেয়, কভিড-১৯ পরিস্থিতি বাদে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার কারণে এমনটা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্য আমদানির ওপর শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন, যার ফলে পণ্য পরিবহন এবং অন্যান্য লজিস্টিকসেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
কাইক্সিন নামক একটি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সামগ্রিক প্রত্যাশা এপ্রিল মাস থেকে কমে গেছে, যা ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে সর্বনিম্ন। এর ফলস্বরূপ, এপ্রিল মাসে আরও কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
তবে, চীনের শেয়ার বাজার “গোল্ডেন উইক” ছুটির পর পুনরায় চালু হওয়ার পরে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৩১১.৮৯-এ, যেখানে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৭ শতাংশ বেড়ে ২৩,৬৫০.৬৫-তে পৌঁছেছে।
তাইওয়ানের Taiex সূচক সামান্য ০.১ শতাংশ কমেছে। অস্ট্রেলিয়ার S&P/ASX 200 সূচক ০.২ শতাংশ কমে ৮,১৪৮.৪০-এ দাঁড়িয়েছে।
অপরিশোধিত তেলের বাজারেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। মার্কিন বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম বেড়েছে ৯৩ সেন্ট, যা দাঁড়িয়েছে ৫৮.০৮ ডলারে। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১.২৩ ডলারে।
ওপেক প্লাস (OPEC+) আটটি তেল উৎপাদনকারী দেশের একটি জোট, যারা ১ জুন থেকে দৈনিক ৪,১১,০০০ ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর কারণে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দামে ৪ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছিল।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং সুদের হার বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বুধবার তাদের বৈঠকের পরে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৩ সালে সুদের হার তিনবার কমিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও শুল্ক এবং নীতিগত অস্পষ্টতার কারণে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম।
ফোর্ড মোটর কোম্পানি জানিয়েছে, শুল্কের কারণে তাদের পরিচালন মুনাফায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্থিরতার অন্যতম কারণ হলো বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ এবং তা প্রত্যাহার বা বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত। এমন নীতিনির্ধারণের কারণে ব্যবসা, সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ঘোষণায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যদিও এর প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়, কারণ বর্তমানে অনেক চলচ্চিত্র বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়।
শেয়ার বাজারের এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। অ্যাপল ৩.১ শতাংশ, অ্যামাজন ১.৯ শতাংশ এবং টেসলা ২.৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।
কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এই বছরের শেষে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫.১ শতাংশ কমেছে।
তবে, বিনিয়োগকারীরা সতর্ক রয়েছেন। বাজারের এই পরিস্থিতি তাদের উদ্বেগে ফেলেছে।
বাজারে এখন শুল্ক এবং বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ডলারের মূল্য জাপানি ইয়েনের বিপরীতে বেড়েছে, যেখানে ইউরোর সামান্য উন্নতি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: