আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা: এশীয় শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রবণতা, জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা
আন্তর্জাতিক বাজারে শেয়ারের দামে মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে লাভের ধারা বজায় রাখলেও, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শেয়ার বাজারের চিত্র ভিন্ন। জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এই পরিবর্তনের মূল কারণ।
জাপানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ১৯৫৫ সালের পর এই প্রথম দলটির এমন পরাজয় ঘটল। বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ হলো ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা অবশ্য পদত্যাগ করতে রাজি নন। তবে, এই নির্বাচনের ফল সরকারের দুর্বলতা প্রমাণ করে এবং এর ফলে জাপানের বিশাল ঋণের বোঝা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাপান একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থা এবং দেশটির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে, যা জাপানের নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের প্রধান সুদের হার অপরিবর্তিত রাখায় দেশটির শেয়ার বাজারে উন্নতি দেখা গেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৬ শতাংশ বেড়েছে এবং সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উপাত্তের উন্নতি চীনের নেতৃত্বকে ঋণনীতি শিথিল করতে তেমন চাপ সৃষ্টি করছে না।
এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক ০.৭ শতাংশ বেড়েছে, কারণ দেশটির রপ্তানি খাতে সামান্য উন্নতি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১ শতাংশ এবং তাইওয়ানের তাইক্স সূচক ০.২ শতাংশ কমেছে। ভারতের সেনসেক্স ০.৪ শতাংশ এবং ব্যাংককের সেট সূচক ০.২ শতাংশ বেড়েছে।
এই সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বিক্রি, বেকারত্বের দাবি এবং উৎপাদন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হবে। আলফাবেট ও টেসলার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয়ের হিসাবও প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার, এসএন্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য কমেছে, যেখানে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৩ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট সামান্য বেড়েছে।
বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দামে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। নরফোক সাউদার্ন-এর শেয়ারের দাম ২.৫ শতাংশ বেড়েছে, কারণ তারা ইউনিয়ন প্যাসিফিকের সঙ্গে একত্র হওয়ার আলোচনা করছে। এই একত্রীকরণ সফল হলে উত্তর আমেরিকায় বৃহত্তম রেলরোড তৈরি হবে। তবে, এই চুক্তিতে মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের কঠোর নজরদারি থাকতে পারে। অন্যদিকে, নেটফ্লিক্সের মুনাফা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হলেও, তাদের শেয়ারের দাম ৫.১ শতাংশ কমেছে।
অপরিশোধিত তেলের বাজারেও সামান্য পরিবর্তন দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬৬.০৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৯.২৬ ডলার।
ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের বিনিময় হার বেড়েছে, যেখানে ইউরোর দাম সামান্য বেড়েছে।
বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখন দেখার বিষয়। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: