শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: ট্রাম্প-এর বৈঠকের দিকে তাকিয়ে এশিয়া।
আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগকারীদের নজর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের শীর্ষ নেতার সম্ভাব্য বৈঠকের দিকে। এই আলোচনার ফল কী হয়, তার ওপর নির্ভর করছে এশিয়ার শেয়ার বাজারের গতিপ্রকৃতি।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ার সূচকে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে।
হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৬ শতাংশ কমে ২৬,২৭৬.১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনের শুরুতে সামান্য লাভের পর এটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
অন্যদিকে, সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স ০.২ শতাংশ কমে ৩,৯৮৮.৬৮ পয়েন্টে নেমে আসে। যদিও এক সময় এটি ৪,০০০ পয়েন্ট অতিক্রম করে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আসন্ন বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই চুক্তির সম্ভাবনা বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা কমাতে পারে।
কারণ, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে।
জাপানের শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক নিক্কেই ২২৫ মঙ্গলবার ০.৬ শতাংশ কমে গিয়ে ৫০,২১৯.১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি অর্থনৈতিক উদ্দীপনা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই এই সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
একই দিনে, ট্রাম্প জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়াও, তিনি একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও পরিদর্শন করেন এবং জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তি আরো জোরদার করার পাশাপাশি, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছে। এছাড়া, নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতেও তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাজার বিশ্লেষক স্টিফেন ইননেসের মতে, “এশিয়ার বাজার এখনও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছে।”
এশিয়ার অন্যান্য বাজারের চিত্রও খুব একটা ভালো ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৫ শতাংশ কমে ৯,০১২.৫০ পয়েন্টে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক ০.৮ শতাংশ কমে ৪,১০১.৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শক্তিশালী ভোগ, বিনিয়োগ এবং রফতানির কারণে কোরিয়ার অর্থনীতিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সোমবার কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ১.২ শতাংশ বেড়ে ৬,৮৭৫.১৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৭ শতাংশ বেড়ে ৪৭,৫৪৪.৫৯ পয়েন্টে এবং নাসডাক কম্পোজিট ১.৯ শতাংশ বেড়ে ২৩,৬৩৭.৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের এই উত্থানের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন কোম্পানির ভালো মুনাফার পূর্বাভাসও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। এই সপ্তাহে গুগল, মেটা প্ল্যাটফর্মস, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন এবং অ্যাপলের মতো বড় কোম্পানিগুলোর আয়ের হিসাব প্রকাশের কথা রয়েছে।
বন্ড মার্কেটে, ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডের সুদ সামান্য কমে ৩.৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার এটি ৪.০২ শতাংশ ছিল।
জ্বালানি তেলের বাজারেও দরপতন হয়েছে। প্রতি ব্যারেল মার্কিন ক্রুড তেল ০.১৪ ডলার কমে ৬১.১৭ ডলারে এবং ব্রেন্ট ক্রুড তেল ০.১৮ ডলার কমে ৬৪.৭২ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলারের দরপতন হয়েছে। মঙ্গলবার ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৫২.২২ জাপানি ইয়েন পাওয়া গেছে, যেখানে আগের দিন ছিল ১৫২.৮৮ ইয়েন।
ইউরোর দরও বেড়েছে, ১ ইউরোর বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১.১৬৫৪ ডলারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস