শেয়ার বাজারে তোলাপাড়: ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ! বড় ধাক্কার আশঙ্কা?

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা: এশিয়ার শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রভাব, উদ্বেগে বাণিজ্য যুদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব এখনো কাটেনি। মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ার বাজারে এর মিশ্র প্রভাব দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন একদিকে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির আয়ের হিসাবের দিকে তাকিয়ে আছেন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এই দুইয়ের ওপর নির্ভর করছে বাজারের গতিবিধি।

জাপানের টোকিও স্টক মার্কেট বন্ধ ছিল ছুটির কারণে। তবে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক সামান্য পরিবর্তন হয়ে ২৩,৯৬৯.৬৭-তে এসে দাঁড়িয়েছে।

চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.১ শতাংশ কমে ৩,২৮৫.৬৮-তে নেমে আসে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ০.৭ শতাংশ বেড়ে ২,৫৬৫.৪২-তে পৌঁছেছে।

অস্ট্রেলিয়ার এস অ্যান্ড পি/এএসএক্স ২০০ সূচকও ০.৯ শতাংশ বেড়ে ৮,০৭০.৬০-এ উঠেছে।

তাইওয়ানের তাইওয়ান স্টক এক্সচেঞ্জ ইনডেক্স (Taiex) ১ শতাংশ এবং ভারতের সেনসেক্স সামান্য বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কমেছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে কিছুটা সরে আসতে পারেন।

তবে পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি মনে করেন চীন বাণিজ্য যুদ্ধ কমাতে চায়।

তিনি আরও বলেন, “আমার হাতে এখনো একটি ‘বাড়াবাড়ির চিঠি’ (escalation letter) আছে, এবং আমরা সেটি ব্যবহার করতে চাই না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা প্রায় ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।

অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি অপরিবর্তিত থাকলে তা মন্দা ডেকে আনতে পারে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়ে ৫,৫২৮.৭৫-এ দাঁড়িয়েছে, যা টানা পাঁচ দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৩ শতাংশ বেড়ে ৪০,২২৭.৫৯-এ পৌঁছেছে।

তবে নাসডাক কম্পোজিট ০.১ শতাংশ কমে ১৭,৩৬৬.১৩-তে নেমে আসে।

এই সপ্তাহে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোম্পানির আয়ের হিসাব প্রকাশের কথা রয়েছে।

এর আগে প্রযুক্তি খাতের কিছু প্রভাবশালী শেয়ারের মিশ্র ফল দেখা গেছে।

অ্যামাজন ০.৭ শতাংশ, মাইক্রোসফট ০.২ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে, মেটা প্ল্যাটফর্মস ০.৪ শতাংশ এবং অ্যাপল ০.৪ শতাংশ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে অনেক কোম্পানি তাদের মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে বা বাতিল করেছে।

কারণ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে, যা ব্যবসার পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্য এখনো পর্যন্ত স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে, তবে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে।

বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ০.৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা গত বছরের শেষ দিকে ছিল ২.৪ শতাংশ।

আগামী শুক্রবার প্রকাশিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের প্রতিবেদনও গুরুত্বপূর্ণ।

এতে দেখা যেতে পারে, এপ্রিল মাসে কত নতুন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, মার্চ মাসের ২ লাখ ২৮ হাজার থেকে কমে নিয়োগের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারে দাঁড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তারা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

মঙ্গলবার কনফারেন্স বোর্ডের ভোক্তা আস্থা সূচক প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বন্ড মার্কেটে ট্রেজারি ফল আরও কমেছে।

এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা মার্কিন বন্ড মার্কেটের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা হলেও সন্দিহান হয়ে পড়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারির ফল ছিল ৪.২১ শতাংশ।

অন্যান্য বাজারে, অপরিশোধিত মার্কিন তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫৪ সেন্ট কমে ৬১.৫১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও ৫১ সেন্ট কমে ৬৪.২৮ ডলারে নেমে এসেছে।

ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর বেড়েছে, ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১৪২.৪৯ ইয়েন।

ইউরোর দর কমে ১.১৩৮৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *