মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর শুক্রবার এশিয়ার শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এই শুল্কের মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও অন্যান্য পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক।
এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জাপানের শেয়ার বাজারে, যেখানে সূচক প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একইসাথে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের বাজারেও শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, আসবাবপত্র এবং ক্যাবিনেট প্রস্তুতকারকদের পণ্য এবং ভারী ট্রাক ও যন্ত্রাংশ-এর বিদেশি সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের পণ্য দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। তাই তিনি এই পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
জাপানের শেয়ার বাজার সূচক নিক্কেই ২২৫-এ ০.৯ শতাংশের বেশি দরপতন হয়েছে, যা ৪৫,৩৫৪.৯৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি সুমিটোমো ফার্মা কোং-এর শেয়ারের দাম ৩.৫ শতাংশ কমেছে, যেখানে চুগাই ফার্মাসিউটিক্যাল-এর শেয়ারের দাম প্রায় ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া, শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, টোকিও অঞ্চলে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ২.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। যদিও এই হার আগস্টের সমান, তবে বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার বাজারও এই ধাক্কা সামলাতে পারেনি। কোস্পি সূচক ২.৫ শতাংশ কমে ৩,৩৮৬.০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাজারেও মন্দা দেখা গেছে।
হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৫ শতাংশ এবং সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.৬ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক সামান্য ০.২ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের বিএসই সেনসেক্স ০.৫ শতাংশ এবং তাইওয়ানের তাইএক্স ১.৭ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিটে টানা তৃতীয় দিনের মতো দরপতন হয়েছে। এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে, যা এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ০.৪ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট ০.৫ শতাংশ কমেছে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এর ফলে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল হতে পারে।
যদিও ফেডারেল রিজার্ভ এরই মধ্যে চলতি বছর সুদের হার কমানো শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ার বাজারগুলোতে অস্থিরতা একটি কাঠামোগত দুর্বলতা প্রকাশ করছে। ওষুধের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়তো নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির জন্য, কিন্তু এর প্রভাব বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার ওপর পড়ছে।
এছাড়া, বাজারের উচ্চ মূল্যায়ন হওয়ায় সামান্য পরিবর্তনেও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল প্রায় ৬৫.৩৪ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৭,০০০ টাকা), যেখানে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৬৮.৮৪ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৭,৪০০ টাকা)।
এছাড়া, মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দাম সামান্য বেড়েছে, অন্যদিকে ইউরোর দরও বেড়েছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক বৃদ্ধি পেলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে, যা বাজারে পণ্যের দামে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং দেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস