মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: এশিয়ার অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব?

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির গ্যাঁড়াকলে এশিয়ার অর্থনীতি, বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক বর্তমানে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে, তেমনই আবার অনেক দেশ, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বাড়ছে বাণিজ্য শুল্কের বোঝা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ফেলতে পারে গভীর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাপান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এর ফলে এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক কিছুটা কমানোর সুবিধা পাবে।

উদাহরণস্বরূপ, জাপানের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চুক্তিগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে, তবে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।

অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এখনো চলছে। সম্ভবত আলোচনার সময় বাড়ানোর জন্য সময়সীমাও বাড়ানো হতে পারে। যদিও এর ফল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারেনি। ফলে তাদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের আশঙ্কা বাড়ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এই দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, চুক্তি না হলে তাদের পণ্য রপ্তানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানো হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের সম্মুখীন হতে হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই শুল্ক এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এশিয়ার অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ইতিমধ্যেই ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য উন্নয়নশীল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।

তাদের মতে, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য নিয়ে বিরোধের কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য শুল্কের এই অস্থির পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হলে, তা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

এর ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে সমস্যা অনুভব করতে পারে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের উচিত হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা এবং বাণিজ্য চুক্তিগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করা।

একইসঙ্গে, দেশের ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা দরকার।

মোটকথা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের এই জটিল পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *