শিরোনাম: ‘অ্যাসাসিন’স ক্রিড’ গেমারদের কটাক্ষের শিকার অধ্যাপক, ভালোবাসার মাধ্যমেই জবাব
ঢাকা: ‘অ্যাসাসিন’স ক্রিড শ্যাডো’স গেমের কিছু খেলোয়াড়ের অনলাইন হয়রানির শিকার হয়ে, তাদের প্রতি ভালোবাসার বার্তা দিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছেন ডার্টমাউথ কলেজের অধ্যাপক সাচি শ্মিট-হোরি।
জাপানি সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই অধ্যাপক, জনপ্রিয় ভিডিও গেমটির একটি সংস্করণে গল্প পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন।
গেমটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই এর কিছু খেলোয়াড়, বিশেষ করে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে চরিত্র চিত্রায়ন নিয়ে আপত্তি জানায় এবং শ্মিট-হোরিকে অনলাইনে আক্রমণ করতে শুরু করে।
মে মাসের শুরুতে, গেমটির প্রচারমূলক ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই শ্মিট-হোরির প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য আসতে থাকে।
খেলোয়াড়রা বিশেষভাবে ইয়াসুকা নামক একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান যোদ্ধার চরিত্র নিয়ে আপত্তি জানায়।
তারা অভিযোগ করে, গেমটিতে ‘অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা’ দেখানো হয়েছে।
অনলাইনে তাকে আক্রমণ করে, তার গবেষণা এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে কিছু গেমিং কমিউনিটির সদস্য।
এমনকি তার স্বামীর নাম প্রকাশ করে তাকেও উপহাস করা হয়।
অধ্যাপক শ্মিট-হোরি জানান, শুরুতে তিনি একা ছিলেন এবং কেউ তাকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেনি।
তাই তিনি নিজের পরিচিত কৌশল অবলম্বন করেন, যা হলো—আলোচনার মাধ্যমে বিদ্বেষের জবাব দেওয়া।
তিনি সরাসরি কিছু সমালোচকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সঙ্গে জুম মিটিংয়ে মিলিত হয়ে তাদের অভিযোগগুলো শোনেন।
যারা তাকে সরাসরি হুমকি দিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।
অধ্যাপক শ্মিট-হোরি’র এই পদক্ষেপের ফল পাওয়া যায়।
অনেকেই তাদের আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান।
তাদের মধ্যে একজন, যিনি শুরুতে অধ্যাপককে অনেক খারাপ কথা বলেছিলেন, পরে অনুশোচনা করে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “আমি মর্মাহত যে আপনাকে এত কষ্ট পেতে হয়েছে এবং আপনার ক্লাস বাতিল করতে হয়েছে।
আমি সত্যিই দুঃখিত।”
আরেকজন, যুক্তরাজ্যের ২৮ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় যুবক আনিক তালুকদার, যিনি শ্মিট-হোরিকে নিয়ে একটি নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন, তিনিও তার সঙ্গে জুম মিটিংয়ে অংশ নেন এবং ১০ বারের বেশি ক্ষমা চেয়েছিলেন।
আনিক জানান, তিনি ভেবেছিলেন গেমটিতে জাতিগত প্রতিনিধিত্বের নামে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে।
তাই তিনি অধ্যাপককে আক্রমণ না করলেও, তার একটি ছবি পোস্ট করেন, যা পরে অন্যান্য ফোরামে ছড়িয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউবিসফট (Ubisoft) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো নিয়ে গবেষণা করে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়।
তবে গেমগুলো কল্পনানির্ভর এবং এতে শৈল্পিক স্বাধীনতা থাকে।
তারা আরও জানায়, “আমরা কোনো ধরনের হয়রানি বা বুলিং সমর্থন করি না।
আমরা একটি সহায়ক এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কীভাবে এই প্রক্রিয়া উন্নত করা যায় সে বিষয়ে ক্রমাগত শিখছি।
সাচি শ্মিট-হোরিকে আমরা তার এই পদক্ষেপের জন্য সাধুবাদ জানাই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে সাধারণত মানুষ আত্মরক্ষার্থে পিছিয়ে যায়।
তবে শ্মিট-হোরির এই পদক্ষেপ অনলাইনে বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস