মৃত্যু-সংক্রান্ত বিলে ফাটল! লেবার এমপিদের কঠোর প্রতিক্রিয়া!

যুক্তরাজ্যে সহায়িত মৃত্যু বিল নিয়ে বিতর্ক: আইনটি কি দুর্বল নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার?

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সহায়িত মৃত্যুর (Assisted Dying) বিল নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি, বিলটিতে আনা কিছু পরিবর্তনের কারণে এর বিরোধিতা করছেন লেবার পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য। তাদের মতে, সংশোধনের পরেও বিলটি দুর্বল এবং বিপজ্জনক রয়ে গেছে।

এই বিলটি যারা সমর্থন করেন, তাদের যুক্তি হলো, এটি জীবন-সংশ্লিষ্ট কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা রোগীদের জন্য একটি মানবিক বিকল্প হতে পারে।

বিলটির মূল বিষয় হলো, কিছু শর্তসাপেক্ষে গুরুতর অসুস্থ এবং অসহায় রোগীদের চিকিৎসকের সহায়তায় জীবন ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া। বিলটি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী এপ্রিল মাসে এটি পুনরায় পার্লামেন্টে উত্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে, বিলটি আইনে পরিণত হতে সম্ভবত ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

বিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে, উচ্চ আদালতের একজন বিচারকের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল, যা এখন একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই প্যানেলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (psychiatrist) এবং একজন সমাজকর্মী (social worker) থাকবেন।

বিলের সমালোচকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো যথেষ্ট নয়। তাদের উদ্বেগের কারণ হলো, বিলটিতে দুর্বল ব্যক্তিদের সুরক্ষার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।

এর মধ্যে শিশু, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি, খাদ্যাভাবে ভোগা রোগী, এবং যারা পারিবারিক অথবা আর্থিক নির্যাতনের শিকার, তাদের সুরক্ষার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

বিলটির বিরোধিতাকারীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই বিলে কোনো ধরনের প্রভাব মূল্যায়ন (impact assessment) করা হয়নি এবং উপশমমূলক সেবার (palliative care) মান উন্নয়নের জন্য কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

তাদের মতে, এই বিলের কারণে দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, বিলের সমর্থকরা বলছেন যে, এই পরিবর্তনের ফলে বিলটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিলের প্রধান উদ্যোক্তা কিম লিডবিটার-এর মতে, নতুন নিয়মে মানসিক ক্ষমতা যাচাই এবং কোনো ধরনের চাপ বা প্ররোচনা আছে কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, রোগীদের জীবন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের জন্য উপলব্ধ সব ধরনের চিকিৎসা এবং সেবার সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। তিনি আরও জানান, বিচারকের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগের ফলে এই প্রক্রিয়া আরও নির্ভরযোগ্য হবে।

তবে, সমালোচকদের আশঙ্কা, চিকিৎসকরা এখন রোগীদের সহায়িত মৃত্যুর বিষয়ে সরাসরি পরামর্শ দিতে পারবেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাছাড়া, এই বিলের মাধ্যমে বেসরকারি খাত মুনাফা অর্জনের সুযোগ পেতে পারে বলেও তারা মনে করেন।

সহায়িত মৃত্যু বিল নিয়ে বিতর্ক এখনও চলমান। বিলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে, কারণ বিরোধীরা এটি বর্তমান আকারে সমর্থন করতে রাজি নন।

তাদের মতে, এটি দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, বিলের সমর্থকরা মনে করেন, এটি রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করবে।

এখন দেখার বিষয়, বিতর্কিত এই বিলটি শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত হয় কিনা।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *