মার্কিন সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ভাগ্যে কী? অজানা ভবিষ্যৎ!

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষেরা, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছেন, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এরিট্রিয়া, গুয়াতেমালা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ঘানা, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এই মানুষগুলো হয়রানির শিকার হয়ে নিজেদের ধর্ম, যৌন পরিচয় অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

আগে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের কথা বলার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জটিলতা বেড়েছে। অনেককে দ্রুত ফেরত পাঠানো হচ্ছে, এমনকি তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এমন দেশেও। আশ্রয় চাওয়ার আবেদন জানানোরও সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকে।

উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার একজন নির্বাচন কর্মী, যিনি নির্বাচনের ফল কারচুপির ভিডিও ধারণ করেছিলেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছিলেন, তাকে তার স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কোস্টারিকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি আরোপ করেন। এর অংশ হিসেবে তিনি আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং এতে কোনো সুস্পষ্ট নিয়ম নেই।

আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা জানান, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের ফোনকল কমে গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, সীমান্ত অতিক্রম করা অনেককে আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ না দিয়েই তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমনকি অনেককে আটক করে রাখা হচ্ছে, যেখানে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী তাদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, আশ্রয় চাওয়ার জন্য আসা মানুষদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে। আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিবাসন সংক্রান্ত নীতির ওপর আদালতের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করে এটিকে ‘বেআইনি’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে প্রবেশের ঘটনা, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলের প্রথম দিকে বেড়ে গিয়েছিল। তবে ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যদিও এখনো প্রতিদিন দুইশ জনের বেশি মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে অনেকেই আশ্রয় চাইছে।

আশ্রয় প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার আইনজীবী জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় প্রতিদিন তারা আশ্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে ১০ থেকে ১৫টি ফোন পেতেন। কিন্তু ট্রাম্পের নীতি গ্রহণের পর সেই সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। আইনজীবীরাও এখন জানেন না কিভাবে আশ্রয় বিষয়ক মামলাগুলো পরিচালনা করতে হবে।

যারা আশ্রয় চেয়েছেন, তাদের অনেকের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা সব নিয়ম মেনে চলেছেন। কিন্তু তারপরও তাদের আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত।

উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ান এক পরিবার, যারা তাদের দেশে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, আশ্রয় চেয়েও কোনো সুরাহা পাননি। তারা মেক্সিকোতে কয়েক মাস অপেক্ষা করার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পান। কিন্তু সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগেই তাদের আবেদন বাতিল করা হয় এবং পরে তাদের কোস্টারিকায় ফেরত পাঠানো হয়।

ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত ডি-পোর্টেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোস্টারিকা ও পানামার মতো দেশগুলোকে ব্যবহার করছে। এসব দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের সাময়িকভাবে রেখে পরে তাদের নিজ দেশে অথবা তৃতীয় কোনো দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

তবে, অভিবাসন নীতির কট্টর সমর্থকেরা মনে করেন, আশ্রয়প্রার্থীদের এই প্রক্রিয়াটি অনেক সময় অপব্যবহার করা হয়। তারা মনে করেন, আশ্রয় চাওয়ার নামে অনেকে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ পান।

বর্তমানে, আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। একদিকে যেমন সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমেছে, তেমনি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আইনি প্রক্রিয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *