গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ছে এথেন্স, পর্যটকদের আগমন আর জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বন্দ।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রিক শহর এথেন্স। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে।
তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে এখন পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ফারেনহাইট) বেশি হওয়ায় অনেক সময় শহরের প্রধান আকর্ষণ অ্যাক্রোপলিসের মতো স্থানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এথেন্স শুধু ইউরোপের উষ্ণতম রাজধানীই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। গরমের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, তা এখন নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই বছর প্রায় ১ কোটি পর্যটকের আগমন হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে। অতিরিক্ত পর্যটকদের কারণে একদিকে যেমন পানির সংকট দেখা দিচ্ছে, তেমনি অবকাঠামোর উপরও চাপ পড়ছে।
এথেন্সের মেয়র হারিস ডুকাস বলছেন, এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এখন “টিকে থাকার লড়াই”। শহরের প্রশাসন গরম মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে হিট অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করেছে, সেই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে কুলিং সেন্টার, জলভর্তি ফোয়ারা এবং ছায়াযুক্ত পার্ক।
তবে শুধু স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই চলবে না। দীর্ঘমেয়াদে শহরটিকে নতুন করে সাজাতে হবে।
এর জন্য শহরের কংক্রিটের কাঠামো পরিবর্তন করে সবুজ এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মেয়র ডুকাস জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে ৭,০০০ গাছ লাগিয়েছেন এবং আগামী চার বছরে আরও ২৮,০০০ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এথেন্সের এই সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঢাকা সহ বাংলাদেশের শহরগুলোতেও গরম বাড়ছে।
গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ এবং বস্তিবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। ঢাকার অনেক স্থানে পর্যাপ্ত গাছপালা ও উন্মুক্ত স্থান নেই, ফলে শহরগুলো দ্রুত গরম হয়ে উঠছে।
এথেন্সের মতো ঢাকাতেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। শহরে আরও বেশি গাছ লাগানো, জলাধার তৈরি এবং সবুজ স্থান বাড়ানোর মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সম্পর্কে জানানোটাও জরুরি।
এথেন্সের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ঢাকা সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরগুলিও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন