আটলান্টিক মহাসাগরে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের শেষ পর্যায়ে, দুটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই সপ্তাহেই ‘ইনভেস্ট ৯৪এল’ এবং ‘ইনভেস্ট ৯৩এল’ নামক দুটি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদ্যা সংক্রান্ত আলোচনায় ‘ইনভেস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে ব্যবহৃত হয়।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (National Hurricane Center) এই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং সেগুলোর গতিপথ ও শক্তি সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
বর্তমানে, ‘ইনভেস্ট ৯৪এল’-এর কারণে বাহামা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে পুয়ের্তো রিকো এবং ভার্জিন আইল্যান্ডসে ভারী বৃষ্টি হতে পারে, যা ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে, ‘ইনভেস্ট ৯৩এল’ বারমুডার দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং এটি সম্ভবত একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতিপথ পরিবর্তনশীল হতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে জেট স্ট্রিমের কারণে এদের দিক পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
যদি উভয় ঘূর্ণিঝড় কাছাকাছি চলে আসে, তবে তাদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার কারণে পূর্বাভাস আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
সাধারণত অক্টোবর মাস থেকে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থল আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকে সরে এসে আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরের দিকে চলে আসে। এই অঞ্চলগুলো স্থলভাগের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে ঘূর্ণিঝড়গুলো আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি থাকে।
এ বছর আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড় মৌসুম কিছুটা শান্ত থাকলেও, পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত মাত্র সাতটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যা গড়পড়তা সংখ্যার চেয়ে কম, তবে এদের মধ্যে কিছু শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল।
উদাহরণস্বরূপ, আগস্টে ‘ইরিন’ এবং সম্প্রতি ‘গ্যাব্রিয়েল’ ঘূর্ণিঝড়গুলো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অক্টোবর ও নভেম্বরে আরও কিছু ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত, এই সময়ে গড়ে দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।
গত বছর অক্টোবর মাসের শুরুতে ‘মিল্টন’ নামক একটি ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরিডা উপদ্বীপে আঘাত হেনেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ছে এবং এর প্রভাব সারা বিশ্বে অনুভূত হচ্ছে। যদিও এই ঘূর্ণিঝড়গুলো সরাসরি বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলবে না, তবে বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি ও সচেতনতা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন