পূর্বাঞ্চলে বন্যা: ভয়ঙ্কর নদীর তাণ্ডবে কি ডুববে দেশ?

**যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বন্যা: আবহাওয়ার একটি বিশেষ রূপ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব**

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার কারণ ছিল একটি শক্তিশালী ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, আবহাওয়ার এই বিশেষ রূপটি কিভাবে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

আবহাওয়ার এই নদীগুলো আসলে বায়ুমণ্ডলের সংকীর্ণ স্থান দিয়ে বয়ে যাওয়া জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসের স্রোত, যা অনেকটা একটি বিশাল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মতো কাজ করে এবং প্রচুর বৃষ্টি বা তুষার নিয়ে আসে।

এই ঘটনাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলো আরও বেশি ঘন ঘন ঘটছে।

বিশেষ করে, এপ্রিল মাসের শুরুতে হওয়া এই বন্যাটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ‘ক্যাটাগরি ৫’ পর্যায়ের বায়ুমণ্ডলীয় নদীর ফল। এর ফলে টেক্সাস থেকে শুরু করে কেনটাকি-ওহাইও সীমান্ত পর্যন্ত ৭৫০ মাইলের বেশি এলাকাজুড়ে ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার (৬ থেকে ১০ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এছাড়া, আরকানসাস, টেনেসী, মিসৌরি এবং কেনটাকির কিছু অংশে মাত্র তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি (১ ফুটের বেশি) বৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়।

পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে, এই ধরনের আবহাওয়ার নদীগুলো সাধারণত বেশি পরিচিত। সেখানকার পাহাড়ী অঞ্চল এই বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী।

কিন্তু পূর্বাঞ্চলে, পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস একটি ‘ফ্রন্ট’-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে ভারী বৃষ্টি ঘটায়। এপ্রিল মাসের শুরুতে কেনটাকি সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে এই ধরনের ফ্রন্ট সক্রিয় ছিল, যার ফলস্বরূপ ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

কেনটাকি এবং তার আশেপাশের রাজ্যগুলোতে এই বছর বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও এখানে বন্যা হয়, যাতে ১২ জনের মৃত্যু হয়।

আবহাওয়ার এই নদীগুলো কেন এখানে এত বেশি প্রভাব ফেলে, তার কারণ হলো আটলান্টিক মহাসাগরের কাছাকাছি একটি উচ্চ চাপের এলাকা, যা মেক্সিকো উপসাগর ও ক্যারিবীয় সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিয়ে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোতে আরও বেশি জলীয় বাষ্প যুক্ত হচ্ছে, ফলে বৃষ্টির পরিমাণও বাড়ছে।

এর ফলে ভবিষ্যতে বন্যা আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন এবং এটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়, যেখানে বর্ষাকালে প্রায়ই বন্যা দেখা যায়।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *