অডি’র ৭,৫০০ কর্মী ছাঁটাই: জার্মান অটো শিল্পে অশনি সংকেত?

জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা অডি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের কর্মী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের জার্মানিতে অবস্থিত কারখানাগুলো থেকে প্রায় ৭,৫০০ কর্মী ছাঁটাই করা হবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির (Electric Vehicle বা EV) উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়ার জন্য খরচ কমানোর পরিকল্পনা অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।

অডি জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা তাদের মাঝারি মেয়াদে ১ বিলিয়ন ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি) সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, আগামী পাঁচ বছরে তারা তাদের জার্মান প্ল্যান্টগুলোতে ইভি (EV) তৈরির জন্য ৮ বিলিয়ন ইউরোর বেশি (প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগ করবে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে, বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অডির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই ছাঁটাই তাদের বিশ্বব্যাপী কর্মীসংখ্যার প্রায় ৮.৬ শতাংশ।

জার্মান অটোমোবাইল শিল্পে এই ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা নতুন নয়। অডির মূল কোম্পানি ফোকসভাগেনও (Volkswagen) এর মধ্যেই এই দশকে জার্মানি থেকে প্রায় ৩৫,০০০ কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

ফোকসভাগেন সতর্ক করেছে যে, তাদের ব্যবসার ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কারণ, তারা চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং তাদের বিক্রিও কমছে।

জার্মান গাড়ি নির্মাতারা চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দেরিতে ইভি (EV) উৎপাদন শুরু করেছে। বর্তমানে তারা BYD এবং Xpeng-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জার্মান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিও জার্মানির অটো শিল্পের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

যদি এই শুল্ক কার্যকর করা হয়, তবে জার্মান গাড়িগুলো মার্কিন ভোক্তাদের কাছে আরও বেশি দামি হয়ে উঠবে, যা তাদের চাহিদা কমাতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাজারের পরিবর্তনের ফলে কর্মসংস্থানে যে প্রভাব পড়ছে, তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

আমাদের দেশের শিল্পখাতকেও বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *