মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার থেকে ফিরে আসা: মাটি কাঁপানো জয়ে ফোর্কনরের অবিচল যাত্রা!

অদম্য সাহস আর অগণিত আঘাতকে সঙ্গী করে, মাটির বাইকের রেসিং-এর জগতে নিজের স্থান ধরে রেখেছেন অস্টিন ফর্কনার। এই দুঃসাহসী প্রতিযোগীর জীবন যেন এক কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ।

পেশাদার এই রেসিং তারকার শরীরে অসংখ্যবার আঘাত হেনেছে, ভেঙেছে হাড়, এমনকি মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু প্রত্যেকবারই যেন নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছেন তিনি, প্রমাণ করেছেন নিজের অদম্য জেদ।

যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে জন্ম নেওয়া ২৬ বছর বয়সী ফর্কনার, সুপারক্রস রেসিং-এর অন্যতম পরিচিত মুখ। এই খেলায় মাঠের কঠিন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়তে হয়, যেখানে তীব্র গতি, ঝুঁকিপূর্ণ জাম্প এবং অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে।

এই খেলার আকর্ষণীয় দিকগুলো তুলে ধরে ফর্কনার বলেন, “সুপারক্রস-এর মতো এত চ্যালেঞ্জ অন্য কোনো খেলা দেয় না। এখানে গলফের মতো কৌশল লাগে, আবার ইউএফসি-র মতো মারপিটের মানসিকতাও রাখতে হয়।”

ফর্কনারের শরীরের দিকে তাকালে যেন যুদ্ধের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। একবার নয়, একাধিকবার ভেঙেছে কণ্ঠা, কব্জি, হিপ, এমনকি গোড়ালির হাড়ও। হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়েছে, কাঁধের লিগামেন্ট ছিঁড়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

কয়েক বছর আগে পিঠেও গুরুতর আঘাত পান তিনি। মারাত্মক সব আঘাতকে জয় করে ফর্কনার ফিরে এসেছেন, তাই তার লড়াইয়ের গল্প সবসময়ই অনুপ্রেরণীয়।

তবে, আঘাতের থেকেও বড় দুঃসময় এসেছিল যখন তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করতে হয়। ২০১৯ সালের এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কে “এভিএম” (আর্টারিওভেনাস ম্যালফর্মেশন) রয়েছে।

এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলির অস্বাভাবিক অবস্থা, যা অনেক সময় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ফর্কনার জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে শুনে তিনি খুবই ভয় পেয়েছিলেন। কারণ, খেলাধুলার আঘাত থেকে সেরে ওঠা এক জিনিস, আর মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ ভিন্ন।

অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটাও সহজ ছিল না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, বেশি শারীরিক কসরত করা তার জন্য নিষেধ ছিল। তবে, ফর্কনার দ্রুতই মাঠে ফেরার জন্য প্রস্তুত হন।

ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে তিনি এখন জর্জিয়ায় থাকেন। সেখানে তিনি নতুন দল, ট্রায়াম্ফ রেসিং আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দলের জেনারেল ম্যানেজার জেরেমি কোকার ফর্কনারের প্রতিভার প্রশংসা করেন।

অন্যদিকে, খেলার মাঠের বাইরে ফর্কনারের জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে যখন তিনি বাবা হয়েছেন। মার্চ মাসে তার ছেলে অ্যাটলাস হোপের জন্ম হয়।

ফর্কনার বলেন, “বাবা হওয়ার পর আমার জীবনটা নতুন করে সাজানো হয়েছে। রেসিং আমার পেশা, কিন্তু এখন আমার কাছে পরিবারের গুরুত্ব অনেক বেশি।”

নিজের ছেলের জন্য ফর্কনার চান, সে যেন খেলাটাকে উপভোগ করে। পেশাদার রেসিংয়ের কঠিন দিকগুলো তিনি দেখেছেন, তাই চান না তার ছেলে এই পথে আসুক। মা-বাবার উদ্বেগের কথা ভেবে এখন রেসিংয়ের সময় তিনি আরও সতর্ক থাকেন।

ফর্কনার মনে করেন, বাবা হওয়ার পর তিনি তার বাবা-মায়ের কষ্টগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন।

ফর্কনারের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বুঝিয়ে দেয়, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কতটা প্রতিকূলতা জয় করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *