অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী শনিবার দেশটির ভোটাররা তাদের নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টি এবং বিরোধী দল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল নাগরিকের জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশটির নির্বাচন কমিশন (Australian Electoral Commission – AEC) জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করতে হয়।
নির্বাচনে ভোট না দিলে এবং উপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে প্রায় ২০ অস্ট্রেলীয় ডলার জরিমানা দিতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট দুটি অংশে বিভক্ত: উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। ভোটাররা তাদের এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর সদস্য নির্বাচন করেন, যা মূলত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে। বর্তমানে এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৫১ জন, তবে আসন্ন নির্বাচনে তা কমে ১৫০ জনে দাঁড়াবে।
নির্বাচিত সদস্যরা তিন বছরের জন্য তাদের আসনে থাকেন। সিনেটের সদস্যরা রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাদের মেয়াদ ৬ বছর। এবারের নির্বাচনে সিনেটের ৪০টি আসনে ভোট হবে।
সরকার গঠনের জন্য কোনো দলকে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হয়, অর্থাৎ কমপক্ষে ৭৬টি আসন জয় করতে হয়। যদি কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করতে পারে। লেবার পার্টি এবং লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন ছাড়াও বেশ কিছু ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে ৭,০০০ এর বেশি ভোট কেন্দ্র খোলা হবে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচী থাকায় ভোট গ্রহণের সময়ও ভিন্ন হতে পারে।
এছাড়া, সাধারণ নির্বাচনের আগে থেকেই প্রায় অর্ধকোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এই নির্বাচনে আবাসন সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশটির প্রধান শহর সিডনিতে একটি বাড়ির গড় দাম প্রায় ১৪ লক্ষ অস্ট্রেলীয় ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ কোটি টাকার সমান। সেখানে একটি পরিবারের বছরে গড় আয় করতে হয় প্রায় ২৮০,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৮২ লক্ষ টাকার সমান।
জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধান দলগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে রাজি হলেও, তাদের পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। লেবার পার্টি চাইছে দেশটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ৮০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে।
অন্যদিকে, লিবারেল পার্টি মনে করে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ছোট দলগুলোর সমর্থন সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই মুহূর্তে জনমত জরিপে লেবার পার্টি সামান্য এগিয়ে থাকলেও, ভোটের ফল যে কোনো দিকে যেতে পারে।
যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের দেশের থেকে ভিন্ন, তাই সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার নীতি এবং আদর্শ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন। ভোটের ফলাফল জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা