ক্যানবেরা নয়, জনগণের কথা: আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মূল উদ্বেগ!

শিরোনাম: ২০২৫ সালের নির্বাচনে অস্ট্রেলীয় ভোটারদের উদ্বেগের চিত্র: জীবনযাত্রার ব্যয় ও রাজনৈতিক আস্থার সংকট।

অস্ট্রেলিয়ার আসন্ন ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনের প্রাক্কালে, দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, পরিবার, কাজ এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশা নিয়ে গভীর আলোচনা চলছে। সম্প্রতি, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের উদ্বেগগুলো জানার চেষ্টা করেছে “দ্য গার্ডিয়ান” পত্রিকা।

এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের প্রতি আস্থার সংকট।

আলোচনায় উঠে আসা প্রধান উদ্বেগের মধ্যে ছিল জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ। বাড়ি ভাড়া, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ (এইচইসিএস) – এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে তীব্র মানসিক চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই চাপ ছিল অনেক বেশি।

পশ্চিম সিডনির একটি ক্যাফে ও কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিক আলী এল খায়ের বলেন, “আমার মনে হয় না রাজনীতিবিদরা আমাদের ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন।” তিনি আরও জানান, গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সুদানে তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি তাকে ও স্থানীয় কমিউনিটিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ছোট ব্যবসার মালিক, যেমন অ্যাডিলেডের একটি রেস্টুরেন্ট চালান পল ত্রিপোদি। তিনি জানান, “আমরা কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছি, যা খুবই চাপপূর্ণ।” তিনি সপ্তাহে প্রায় ৬৫-৭০ ঘণ্টা কাজ করেন।

ভিক্টোরিয়ার বালারাতের একটি মালয়েশিয়ান ও ইন্দোনেশিয়ান ক্যাফের মালিক লিলি রাইট জানান, “পরের ছয় মাস বা এক বছরে কি ঘটবে, তা বলা কঠিন।”

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের একজন ব্যবসায়ী ব্রেন্ট ডেলাইট, আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের প্রতি প্রচলিত কিছু ধারণা নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমি নিজের একটি ব্যবসা তৈরি করতে চাই এবং সফল হতে চাই।” নিউ সাউথ ওয়েলসের লেক ম্যাকোয়ারির একজন ঘাস কাটার ব্যবসার মালিক টড বোরার বলেন, “যখন রাজনীতিবিদরা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ হওয়ার ভান করেন, তখন তা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে।”

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান মেলবোর্নের শিক্ষক ও সকার কোচ এড ব্রায়ান্ট।

তিনি বলেন, “শিক্ষক হিসেবে আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশগত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীদের ঋণ (এইচইসিএস) একটি বড় সমস্যা।

সাউথ অস্ট্রেলিয়ার টাইলেম বেন্ডের অবসরপ্রাপ্ত কৃষক জন স্প্যারো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাড়ির মালিকানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এছাড়াও, কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনের একজন ন্যানি ও স্পিচ থেরাপি অ্যাসিস্ট্যান্ট হোলি ব্রানখর্স্ট গণমাধ্যমের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন না বলে জানান।

তিনি মনে করেন, “সবারই নিজস্ব কিছু এজেন্ডা থাকে।” সিডনির একজন শিক্ষার্থী ও খণ্ডকালীন কর্মী ফেডারিকো ক্যানাস ভেলসকো বলেন, “বাড়ির পরিস্থিতি কোনোভাবেই ভালো হচ্ছে বলে মনে হয় না।”

তাসমানিয়ার একটি পোশাক দোকানের মালিক চ্যান্টেল ক্যাম্পবেল নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে তার আস্থার অভাবের কথা জানান।

অ্যাডিলেডের একজন ল্যান্ডস্কেপার উইল গ্রোমাদজকি জানান, “এখানে পর্যাপ্ত আবাসনের অভাব রয়েছে।” মেলবোর্নের আইটি কর্মী ইরফান সৈয়দ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সহায়তার জন্য সরকারের সহযোগিতা ও এনডিআইএস-এর (NDIS) কথা উল্লেখ করেন।

কুইন্সল্যান্ডের টুমেলার একজন নার্স অ্যান-মেরি থমাস রাজনীতিবিদদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেলবোর্নের একজন শিক্ষার্থী ও ক্যাফে কর্মী অ্যামেলিয়া মেকিন এইচইসিএস কমানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এই আলোচনা থেকে বোঝা যায়, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছেন।

এই উদ্বেগগুলো তাদের আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *