গাজায় চলমান সংকট নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আয়োজিত এই বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ প্রতিবাদগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবি জানান।
গত সপ্তাহে সিডনি হারবার ব্রিজে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে প্রায় ৯০ হাজার থেকে তিন লাখ পর্যন্ত মানুষ অংশ নেয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, দেশটির সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ করা, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা।
বিক্ষোভের আয়োজকরা জানান, এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পেনি ওং এই বিক্ষোভের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন গাজায় চলমান মানবিক সংকট এবং নারী ও শিশুদের মৃত্যু নিয়ে অস্ট্রেলীয় জনগণের উদ্বেগের বিষয়টি তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন। তিনি আরও জানান, সরকার শান্তি ও যুদ্ধবিরতির পক্ষে কাজ করছে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ২ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ১৭১ কোটি বাংলাদেশী টাকা, যা ২৩শে মে ২০২৪ এর বিনিময় হার অনুযায়ী) প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা যদিও ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়নি, তবে তারা ইসরায়েলের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক জশ লিস বলেন, তারা এমন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করে না, যা ইসরায়েল ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের মূল দাবি হলো, অস্ট্রেলিয়ান সরকার যেন ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং তাদের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করে।
এই বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার মতো দেশগুলো ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিডিওন সা’র এক টুইটে বিক্ষোভকারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি এই বিক্ষোভকে ‘বামপন্থী ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে একটি বিকৃত জোট’ হিসেবে অভিহিত করেন।
এই বিক্ষোভ অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে দেশটিতে ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা বেড়েছে।
বিষয়টি সমাধানে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিক্ষোভের পর, আয়োজকরা আগামী ২৪শে আগস্ট দেশব্যাপী আরও একটি সমাবেশের পরিকল্পনা করছেন।
তাদের আশা, এই ধরনের বিক্ষোভের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে এবং গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন