অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যেখানে দেশটির দীর্ঘদিনের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল—ন্যাশনাল পার্টি ও লিবারেল পার্টির মধ্যে ৬ দশকের বেশি সময়ের জোট ভেঙে গেছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল দুটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই এই বিভাজন ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ন্যাশনাল পার্টির নেতা ডেভিড লিটলপ্রাউড জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের ‘বিরতি’ নেওয়ার সময় এসেছে। মূলত গ্রামীণ জনপদগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল পার্টি এবং শহর অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী লিবারেল পার্টির মধ্যে নীতিগত বিভেদ দীর্ঘদিনের।
নির্বাচনের ফলাফলের পর লিবারেল পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকারে ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা দেখছে না ন্যাশনাল পার্টি।
অন্যদিকে, লিবারেল পার্টির নতুন নেতা হিসেবে সুসান লে দায়িত্ব গ্রহণের পর দলের নীতি পর্যালোচনা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি ন্যাশনাল পার্টির এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে লিবারেল পার্টি এখন তাদের পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
নির্বাচনে লেবার পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
নির্বাচনে লিবারেল পার্টি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ২৮টি আসনে জয়লাভ করে, যা তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ ফল।
অন্যদিকে লেবার পার্টি ৯৪টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।
ন্যাশনাল পার্টি নির্বাচনে ১৫টি আসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শহর ও গ্রামের মধ্যেকার বিভেদ এই ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
লিবারেল পার্টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ন্যাশনাল পার্টি অবশ্য নির্বাচনের আগে লিবারেল পার্টির কাছ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু এবং সুপারমার্কেটগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে ব্যর্থ হয়।
ন্যাশনাল পার্টির নেতা লিটলপ্রাউড মনে করেন, লেবার সরকার কয়লা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে, যা নির্ভরযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে।
কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের কৃষকদের প্রতিনিধিত্বকারী ‘এগফোর্স’-এর প্রধান নির্বাহী মাইকেল গুরিন মনে করেন, শহর ও গ্রামের মধ্যেকার বিভেদ বাড়ছে, যা এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
লেবার পার্টির কোষাধ্যক্ষ জিম চালমার্স এই বিভাজনকে ‘পরমাণু বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি মনে করেন, সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে লিবারেল পার্টির উপস্থিতি খুবই সামান্য হবে, যা স্বতন্ত্র এবং ছোট দলগুলোর চেয়ে খুব বেশি বড় হবে না।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা